‘অনুতপ্ত’ নাফিসের দোষ স্বীকার, রায় ৩০ মে

ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত তছনছ করতে চেয়েছিলেন বলে আদালতে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশি নাগরিক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস।

লাবলু আনসার, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2013, 09:34 PM
Updated : 7 Feb 2013, 10:56 PM

রেজওয়ানুল আহসান নাফিস

জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই তিনি ওসামা বিন লাদেনের অনুসারী হন এবং সন্ত্রাসী হামলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, জিহাদের নামে মানুষ হত্যা করা উচিত নয়।

বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের ব্র্রুকলিনে ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে পিনপতন নিরবতার মধ্যে হামলা চেষ্টার দায় স্বীকার করেন নাফিস।

বোমায় ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার এই বাংলাদেশি যুবক আদালতকে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অনুতপ্ত।

“আমি একটি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখন তা কেটে গেছে। আমি অনুতপ্ত।”

অপরাধ স্বীকার করায় ২১ বছর বয়সী এই যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আর এই রায় জানা যাবে ৩০ মে।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআই কথিত ‘স্টিং অপারেশনের’ মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর নাফিসকে গ্রেপ্তার করে । তারা জানায়, এই বাংলাদেশি যুবক এক হাজার পাউন্ড বিস্ফোরক দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার ভ্যানে ‘সত্যিকারের বিস্ফোরক’ না থাকায় সেটি আর ফাটেনি।

গত ১৫ নভেম্বর গ্র্যান্ড জুরি নাফিসের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন করে। এতে ‘ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্যে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা’ এবং ‘একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার চেষ্টা’র অভিযোগ আনা হয়। এর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে করা হয় অভিযোগ গঠন। 

বৃহস্পতিবার নাফিস অপরাধ স্বীকার করার পর বিচারপতি ক্যারল অ্যামন নানাভাবে অন্তত ২৫ বার তার কাছে জানতে চান- শাস্তি কমিয়ে দেয়া বা অন্য কোনো প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে তিনি দোষ স্বীকার করছেন কি না।

জবাবে নাফিস প্রতিবারই বলেন, তিনি নিজে থেকে বুঝতে পেরেই দোষ স্বীকার করছেন।

বিচারপতি নফিসকে বলেন,  দোষ স্বীকার করায় তার ৩০ বছরের জেল এবং আড়াই লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই কোটি টাকা) জরিমানা হতে পারে। জেল খাটার সময় প্যারলে মুক্তির সম্ভাবনা নেই। এমনকি একবার দোষ স্বীকার করলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও কোন সুযোগ তিনি পাবেন না।

সব শুনেও নাফিস স্বাভাবিক কণ্ঠে বলেন, তিনি বুঝেই দোষ স্বীকার করছেন।

নাফিসের এই শুনানির সময় আদালতের দর্শক গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তবে বাংলাদেশের কোনো কূটনীতিককে আদালতে দেখা যায়নি।

নাফিস গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছবি হাতে তার বাবা কাজী আহসান উল্লাহ।

নাফিস আদালতে হাজির হন কারাগারের পোশাকে। তবে বেশ পরিপাটি দেখাচ্ছিল তাকে। শুনানির সময় আদালত এলাকায় নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

শুনানি শেষে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লরেটা ই লিঞ্চ ও লুনম জেমস ফেডারেল কোর্টের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। আমেরিকার নিরাপত্তা রক্ষায় ‘যথাযথভাবে’ দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান লরেটা ই লিঞ্চ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নের জবাবে নাফিসের জন্য সরকারের নিয়োগ করা আইনজীবী হেইডি সিজার বলেন, “নাফিস সবকিছু বুঝে নিজে থেকেই দোষ স্বীকার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

গত বছরের জানুয়ারিতে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব মিসৌরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নাফিস। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে ওই কোর্স শেষ না করেই জুনের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে একটি টেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তিনি।

এফবিআই নাফিসকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।