চট্টগ্রাম, সিলেট, চাঁদপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, কুমিল্লা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জেলা এবং বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এসব বিক্ষোভে যোগ দেন নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো জনতা।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেয়ার পর মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগে শুরু হয় প্রতিবাদী কর্মসূচি।
জামায়াতে ইসলামীর হরতালের মধ্যেই বুধবার তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন প্রান্তে। শহীদ মিনার আর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পরিণত হয় গণজমায়েতে।
এরই মধ্যে রাজধানীতে এক সমাবেশ থেকে শুক্রবার মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের খবরে-
সিলেট: বুধবার বিকাল ৪টা থেকে সিলেটের চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। গণসঙ্গীত, ফাঁসির দাবিতে স্লোগানের মধ্য দিয়ে চলছে এ কর্মসূচি।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকরা পদযাত্রা করে শাবি ক্যাম্পাস থেকে সমাবেশে যোগ দেন।
কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে সেখানে অবস্থান নেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিনী শাবি শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শাসমুল আলম।
এ সময় জাফর ইকবাল বলেন, একাত্তর সালে তারা কি করেছিল তা আমরা দেখেছি, কি করেছে তা জানি। একমাত্র ফাঁসিতে ঝোলানোই হচ্ছে ন্যায় বিচার। এটি প্রতিষ্ঠিত না হলে এদেশের অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা-শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।
এর আগে দুপুরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার কুশপুতুল পোড়ানো হয়। এছাড়া সকাল থেকেই প্রতীকী অনশন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে ছাত্রশিক্ষকরা।
চট্টগ্রাম: বুধবার বিকাল থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী তরুণ উদ্যোগ’।
উদীচী, বোধন, প্রমা, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, চারণ, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম, অনলালইন ব্লগার ফোরাম, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, যুব ইউনিয়ন, যুব মৈত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তৃতার পাশাপাশি প্রতিবাদী গান, কবিতা আবৃত্তি ও কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন অংশগ্রহণকারীরা।
এছাড়া চট্টগ্রাম চারুকলার শিক্ষার্থীরা সড়কে ব্যঙ্গ চিত্র অংকন করেন।
অন্যদের মধ্যে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী তরুণ উদ্যোগ, চট্টগ্রামের আহবায়ক শরীফ চৌহান সমাবেশে বক্তব্য দেন।
চাঁদপুর: জেলায় ফাঁসির দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা।
দুপুরে শহরের কালীবাড়ি এলাকায় এই অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ, মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার হাফেজ খান, সিরাজুল ইসলাম বরকন্দাজ, আবু তাহের পাটওয়ারী, আবুল কালাম চিশতি প্রমুখ।
অবস্থান ধর্মঘটে বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কাদের মোল্লা তথা কসাই মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণা করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন বুধবার।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়ে পুরো দেশেবাসীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজও হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করছে।
“আমরা মনে করি এই রায়ে দেশবাসীর প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়নি। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।”
বিকাল ৪টা থেকে দেশের গান ও কবিতার ফাঁকে ফাঁকে চলে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ।
নোয়াখালী: অবস্থান কর্মসূচি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও সমাবেশে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
রাতে সংক্ষুব্ধ জনতার ব্যানারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকের বেদিতে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক মানুষ এতে অংশ নেন।
শহীদ বেদিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও সমাবেশের পর জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: সকালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে মৌণ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে ও সাদা কাপড়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জামালপুর: চেতনায় একাত্তরের উদ্যোগে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের মুক্তমঞ্চে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এতে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে উদীচীর শিল্পীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করে।
অন্যান্য জেলা থেকেও একই ধরনের বিক্ষোভ প্রতিবাদের পাওয়া যাচ্ছে।