নারীর ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ অবরোধ

তুমাচিং মারমার হত্যাকারীদের বিচার এবং সারাদেশে নারী নির্যাতন বন্ধের দাবিতে পার্বত্য তিন জেলায় ডাকা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।

বান্দরবান প্রতিনিধিখাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2013, 10:29 PM
Updated : 27 Jan 2013, 02:54 AM

রোববার আধাবেলার এ অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে কোথাও কোনো গোলোযোগের খবর পাওয়া যায়নি।

তবে বান্দরবানে পুলিশ পিকেটারদের লাঠিপেটা করে বলে অবরোধকারীরা জানিয়েছেন।

ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অবরোধে চলাকালে আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করেনি। নৌচলাচলও বন্ধ থাকে।

এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

গত ২১ ডিসেম্বর রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ৪ম্বর কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলু গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাইনু চিং মারমা ওরফে তুমাচিং মারমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বত্তরা।

এ ঘটনা এবং সারাদেশে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে পাহাড়ি নারী সংগঠন উইমেনস রিসোর্স নেটওয়ার্ক, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও দুর্বার নেটওয়ার্ক মিলে গঠিত মোর্চা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটি’ ছয় ঘণ্টার এই অবরোধের ডাক দেয়।

আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালিত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা ধর্ষণকারীদের নিন্দা জানাই। তবে অবরোধের কারণে কোথাও যেন কোন ধরনের সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা না হয় তার জন্য জেলার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে জোর নিরাপত্তার নেয়া হয়।

“কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি”, বলেন এসপি।

অবরোধকারীরা সকালে জেলা শহরের ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। কোথাও কোথাও খণ্ড খণ্ড মিছিল করতে দেখা যায়।

অবরোধ শেষে দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের মুক্তমঞ্চে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তুমাচিং মারমাসহ পার্বত্য চট্রগ্রামে নারী ও শিশু ধর্ষক ও হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানানো হয়।

নারী নেত্রী নমিতা চাকমার সভাপতিত্বে বাসন্তি চাকমা, শাপলা ত্রিপুরা,  লালসা চাকমা, সাংবাদিক আবু দাউদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, আধাবেলা অবরোধ চলাকালে জেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

জেলা শহর থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার পথে কোনো বাস বা লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।

অবরোধ শেষে জেলা শহরের নিউমার্কেট চত্বরে সমাবেশ করেন অবরোধ সমর্থনকারীরা।

সমাবেশ থেকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তুমাচিং মারমার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা নাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান বক্তারা।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির টুকু তালুকদার, মানিক লাল দেওয়ান, সদস্য নিরুপা দেওয়ান, কনিকা বড়–য়া, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, সুস্মিতা চাকমা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, অবরোধ চলাকালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি নাইট কোচ বান্দরবান শহরে ঢুকতে গেলে পিকেটাররা তাতে বাধা দেয়।

এ সময় পুলিশ সেখানে এসে পিকেটারদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে অভিযোগ করেন নারীনেত্রী ডনাই প্রু নেলী।

বান্দরবান সদর থানার ওসি মনির হোসেন বলেন, রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার কারণে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার অধিকার কারো নেই।