রাশিয়া থেকে ফেরার পাঁচ দিন পর বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী এর আগে অন্য দেশ থেকে একই প্রক্রিয়ায় অস্ত্র কেনার তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে রাশিয়া থেকে এই সমরাস্ত্র কেনা হবে। আর, এই ঋণের কিস্তি ২০১৮ থেকে দেয়া শুরু হবে।
“কিন্তু জিনিস যা কিনেছি, তা এখন থেকে আসতে থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রীর সফরে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়, যার আওতায় দেশটি ১০০ কোটি ডলার দেবে, যা দিয়ে দেশটি থেকে বিভিন্ন সমর সরঞ্জাম কেনা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নীতি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা। যার কাছ থেকে আমরা যেটা সহজভাবে পাব, সেটাই নেব।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের বর্তমান মজবুত অবস্থান ধরে রাখতে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার সমালোচনা করে কয়েকটি প্রত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা অস্ত্র নিয়ে কথা বলছে, তারা কি চায় না, সামরিক বাহিনী শক্তিশালী হোক?”
এর আগে চীন থেকে ‘স্টেট ক্রেডিটে’ সমরাস্ত্র কেনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের সময়ে চীন থেকে ৪৪টি ট্যাংক এবং যুক্তরাজ্য থেকে সার্ভে জাহাজ কেনার কথা জানান তিনি।
“চীন থেকে ট্যাংক আর যুদ্ধবিমান কিনলাম। সেখানে তো কেউ কোনো কথা বলল না। বাজেটের টাকা দিয়ে কিনলাম। সেটা নিয়ে তো কথা উঠল না। এত টাকার ট্যাংক কেনার কী দরকার? সেই প্রশ্ন তো কেউ করল না,” সমালোচকদের উদ্দেশে প্রশ্ন শেখ হাসিনার।
“সামরিক বাহিনীর ঘাড়ে চড়ে ক্ষমতায় যাবেন। আর, তাদের জন্য অস্ত্র কিনলে এত অনীহা কেন? এটাই আমার প্রশ্ন,” রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিএনপির সমালোচনার প্রতিক্রিয়া দেখান তিনি।
“এরপর, হয়ত প্রশ্ন আসবে- সামরিক বাহিনীর দরকার কী?”
“বিমান বাহিনীকে তো নিধিরাম সর্দার বানিয়ে রাখা হয়েছিলে। বিমান বাহিনীর কোনো মিসাইল ছিল না। আমরাই কিনেছি।”
‘কমিশনের জন্য রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা হচ্ছে’- বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের বক্তব্যের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “স্টেট টু স্টেট ক্রেডিট। টাকা সরকার থেকে সরকারে চলে যাবে। মাঝখানে ধরার উপায় নেই।
“কমিশন ওনারা (মওদুদ আহমদ) খান। যারা কমিশন-টমিশন খান, তারাই জানেন- কীভাবে কমিশন খেতে হয়।”
অতীতের মতো সরকারি সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সবকিছু প্রকাশ্যে আলোচনা হয় না জানিয়ে এক্ষেত্রে সংবিধানেও তা দেখে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “যারা স্বাধীনতার বন্ধু। যারা আমাদের স্বার্থে জাতিসংঘে ভেটো দিয়েছিল, তাদের কাছ থেকে কিনলে কথা। আর, যারা বিরোধিতা করল, তাদের কাছ থেকে কিনলে সাধুবাদ!”
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সময়ে ‘স্টেট ক্রেডিটে’ চীন থেকে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ সুদে অস্ত্র কেনা হয়েছিল।
সমরাস্ত্র কেনায় সুদের হার সব সময়ই একটু বেশি হয়, যুক্তি দেখান তিনি।
সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে সাগরে বিশাল এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোনের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টিও আমলে নেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
“এপিসি (আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার), হেলিকপ্টার, পরিবহণ বিমান- এগুলোও আমাদের জন্য প্রয়োজন।”
রাশিয়া সফর ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে জানিয়ে এই প্রসঙ্গে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের কথাও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।
১৯৭২ সালে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে রাশিয়ার আটটি মিগ-২১ যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেয়ার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
রাশিয়াকে বাংলাদেশের ‘পরম বন্ধু’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে আজীবন কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছে (রাশিয়া)। এ সফরের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব পুনর্জাগরিত হয়েছে।”
সফরকে সফল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যার সুফল জনগণ দীর্ঘমেয়াদে ভোগ করবে। বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী রূপ নেবে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বৈশাখী টেলিভিশনের মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, এপি’র ফরিদ হোসেন, নিউজ টু’ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা, একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল বাবু, সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন।