পরমাণু কেন্দ্রের কাজ সেপ্টেম্বরে

চলতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই রূপপুরে ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2013, 01:55 AM
Updated : 23 Jan 2013, 06:58 AM

চলতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরের সময় এ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়।

এছাড়া রাশিয়া থেকে ১০০ কোটি ডলারের সমর সরঞ্জাম কেনার বিষয়েও একটি চুক্তি হয় প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরে।

গত ১৪ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের ওই সফরের অভিজ্ঞতা দেশবাসীকে জানাতে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, তিনটি চুক্তি ও ছয়টি সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। 

শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, চুক্তির আওতায় আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই রূপপুর প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ফলে এই কাজ অনেক সহজ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাশিয়ার আনবিক শক্তি কর্পোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক সের্গেই কিরেনকো গত ১৬ জানুয়ারি মস্কোয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং চলতি বছরই রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণ শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোসাটম এ বছরের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ শুরু করার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”

তিনি জানান, এজন্য বাংলাদেশকে মার্চের মধ্যে একটি আইনি প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। নকশা চূড়ান্ত হবে মে মাসের মধ্যে। অগাস্টের মধ্যে নির্মাণ এলাকার প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মূল নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

এ কাজ ‘দ্রুত ও সুচারুভাবে’ সম্পন্ন করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সমন্বয়ের জন্য শিগগিরই একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের শর্ত পূরণ করতেই রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে যে আলোচনা হচ্ছে- সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কোনো শর্ত নেই। এটা আলাদা ডিল। বিদ্যুত কেন্দ্র করার কথা তো অনেক আগে থেকেই চলছে।”

শেখ হাসিনা জানান, এই বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলার সঙ্গে সঙ্গে এর কার্যক্রম পরিচালনার প্রশিক্ষণও চলবে।

“পারমাণবিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি”, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি, পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা আছে। আবার একটি ভীতিও কাজ করে। তাদের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করে।”

“পারমাণবিক চুল্লির নিরাপত্তার প্রতিটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চুল্লিতে ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেয়া হবে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দুইটি চুক্তি হয়েছে। এর একটির আওতায় প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলদেশ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কত খরচ হবে, তা নির্ধারণে কারিগরি গবেষণার জন্য আগামী দুই বছরে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।

অন্য চুক্তির আওতায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত একটি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে জনগণকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে সচেতন করা হবে। নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হবে।

“সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উভয় দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করবে।”

রূপপুর কেন্দ্রে এক হাজার মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিট স্থাপনে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে বলে অর্থায়ন চুক্তির খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছিল।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গত নভেম্বরে রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ।

ওই চুক্তি অনুয়ায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রুশ সরকার। পাশাপাশি কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ এবং ব্যবহৃত জ্বালানিও ফেরত নেবে তারা।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। পরে তা আরো ২০ বছর তা বাড়ানো যাবে বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ইতোপূর্বে জানিয়েছেন।