‘রুশ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে প্রধানমন্ত্রী’

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্য নিয়ে তিন দিনের সরকারি সফরে সোমবার রাশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নুরুল ইসলাম হাসিব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2013, 09:49 AM
Updated : 13 Jan 2013, 09:49 AM

এই সফরে রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হবে, যার প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ।

সকাল ৯টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে মস্কোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী।

রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরকালে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু থাকবে পরমাণু শক্তি, প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা। এছাড়া দেশে একটি পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনসহ চারটি চুক্তি ও ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে ১০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি এই সফরে সই হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম ওয়াহিদুজ্জামান।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি শেখ হাসিনার দ্বিতীয় রাশিয়া সফর। এর আগে ২০১০ সালের নভেম্বরে বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ গিয়েছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ও যুদ্ধ পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানের কথা স্মরণ করে দীপু মনি বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার অনেক সম্ভাবনা দীর্ঘদীন ধরে অবহেলিত আছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সহয়তাকারী এই দেশ সফর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দীপু মনি বলেন, সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি রোববার তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাহরাইনে অগ্নিকান্ডে নিহত বাংলাদেশিদের মরদেহ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানান।

সফরকালে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আইন ও বিচার এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সময় উপস্থিত থাকবেন তিনি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন এবং বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

পরমাণু চুক্তির অধীনে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক কাজের অর্থায়নের জন্য ৫০ লাখ ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি এবং ঢাকায় পরমাণু শক্তি তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য দুটি ভিন্ন চুক্তি সই হবে।

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র্রের প্রকৃত কাজের অর্থায়নের প্রধান পরিমাপকগুলোর বিষয়ে রাশিয়ার সমঝোতার বিষয়ে ৫০ লাখ ডলারের একটি স্মারক সই হবে।

মন্ত্রী বলেন, এসফরে বাণিজ্য সুবিধার দ্বার উন্মোচন করবে। কারণ একই শুল্ক অঞ্চলের আওতায় রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তানে প্রায় ১৮ লাখ ক্রেতার বাজার রয়েছে।

তিনি বলেন, “এই বাজারে আমাদের পণ্য প্রবেশের সুযোগ পেলে তা আমাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করবে।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সরকারগুলো রাশিয়ার সঙ্গে এ সম্পর্কের চর্চা করেনি বলে জানান তিনি।

“এমনকি যারা রাশিয়ায় পড়াশোনা করেছে, তারাও দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।”

স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি মস্কোর শেরেমেতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। বিমানবন্দরে উষ্ণ অর্ভ্যথনা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহ মস্কোর প্রেসিডেন্ট হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। রাশিয়ায় ৩ দিনের সফরের সময় তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন।

এরপর শেখ হাসিনা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের দেয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। রুশ ফেডারেশনের ফেডারেল কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন ভ্যালেন্তিনা ইভানোভানো ম্যাতভিয়েনকো এবং রুশ ফেডারেশনের যোগাযোগ ও গণমাধ্যম মন্ত্রী নিকোলে নিকিফোরভ শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত দেখা করবেন।

এছাড়া রাশিয়ার পরমাণু সহযোগিতা সংস্থা আরওএসএটিওএম-এর জেনারেল ডিরেক্টর সার্গেই কিরিয়েঙ্কো শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন।

ক্রেমলিন জাদুঘর, বলশয় থিয়েটার ও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি গ্যাজপ্রম কেন্দ্রও পরিদর্শন করবেন শেখ হাসিনা।

সফরে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি ‘কনটেম্পরারি বাংলাদেশ-পার্সপেক্টিভ ফর কলাবোরেশন উইথ রাশিয়া’ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। পরে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন এবং ইউনিভার্সিটির রেক্টরের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।