ফ্লাইওভার ভেঙে ৯ জনের মৃত্যু

নিহত নয় জনের মধ্যে সাত জন ঘটনাস্থলে এবং দুই জন হাসপাতালে নেয়ার পর মারা গেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2012, 05:06 PM
Updated : 25 Nov 2012, 03:08 AM

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে মৃতের সংখ্যা নয় জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক, যাদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ভোররাতে ফ্লাইওভার সংলগ্ন বহদ্দারবাড়ি পুকুর থেকে আরো চারজনের মৃতদেহ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বহদ্দার বাড়ি পুকুরে ফ্লাইওভারের ভেঙে পড়া একটি গার্ডারের খ-ের নিচ থেকে আরো চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা।

এর আগে সন্ধ্যায় গার্ডার ভাঙার পরে শনিবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান। আরো দুজন হাসপাতালে নেয়ার পর মারা গেছে বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে জানানো হয়।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কের বহদ্দার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে তিন জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, সাজ্জাদ (২০), শাহাবুদ্দিন ও কাজল চন্দ্র দে।

ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী ও সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহন। এ ছাড়া বহদ্দারহাট মোড়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন ওয়েল ফুডের প্রদর্শনকেন্দ্রও ভাঙচুর করা হয়।

উদ্ধারকাজে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নিয়োগ করা হয়েছে বিজিবি।

সিডিএর তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যাতে ব্যয় ধরা হয় ১০৬ কোটি টাকা। পারিশা এন্টারপ্রাইজ ও মীর আক্তার এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এর নির্মাণ কাজ করছে। চলতি বছরের ২৯ জুন একই ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে এক রিকশাচালক আহত হয়েছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিন্টু চৌধুরী, প্রতিবেদক উত্তম সেনগুপ্ত ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

তারা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গার্ডার ভেঙে পড়ার পর নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের আর্তনাদ শোনা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজ শুরু না হওয়ায় বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে তারা ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী ও সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ফ্লাইওভারের পাশে থাকা শাহ আমানত ডেকোরেটরসের মালিক শাহ হাজি মো. বখতিয়ার বলেন, তিনটি গার্ডার পরপর ভেঙে পড়তে দেখেছি। আমার ধারণা, এগুলোর নিচে ৬০ থেকে ৭০ জন চাপা পড়ে থাকতে পারে।

স্থানীয়রা বলছেন, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটির নিচ দিয়ে প্রতিদিন বিকালে অসংখ্য মানুষ চলাফেরা করে। বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিক। তাছাড়া তরকারি ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন এর নিচে বসে বেচাকেনা করেন।

ফলে গার্ডারের নিচে তাদের অনেকেই চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

উত্তেজিত জনতার ভাঙচুর, বিক্ষোভ

ঘটনার প্রায় ঘণ্টাখানেক পর জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ফের বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বহদ্দারহাট মোড় ও নতুন চান্দগাঁও থানার সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় জেলা প্রশাসকের গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিস, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (রাজস্ব) জিপ ও অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুরের শিকার হয়।

এ ছাড়া আরো ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, যার মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিন্টু চৌধুরীর মোটরসাইকেলও রয়েছে। এ সময় তারা হামলা চালায় পুলিশ বক্স ও প্রকল্পের ঠিকাদারের অস্থায়ী কার্যালয়ে।

ঘটনাস্থলে গণশিক্ষামন্ত্রী, মেয়র

রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী আফসারুল আমীন, সিটি মেয়র মনজুর আলম, পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় আফসারুল আমীন সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান।

মহিউদ্দিন চাইলেন শাস্তি

এদিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এই ঘটনার দায় ফ্লাইওভার নির্মাণের সঙ্গে যুক্তদের। তিনি সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি।

দেয়াল ধসে আহত ১২

এদিকে ঘটনাস্থলের পাশে বহদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। তারা ওই দেয়ালে উঠে উদ্ধারকাজ দেখছিলেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আহতদের অবস্থা জানাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন প্রতিবেদক তাবারুল হক। তিনি জানান, দেয়াল ধস ও গার্ডার ভেঙে আহত ২২ জনের চিকিৎসায় বিশেষায়িত চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।