বাংলাদেশ ব্যাংকের অব্যাহতির আদেশের ২ মাস ১১ দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে 'ইস্তফা' দিয়েছেন।
এরই মধ্যে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেও তার পদ ছাড়ার এই 'ঘোষণা' আসে গ্রামীণ ব্যাংকের প্যাডে লেখা সম্বোধনহীন এক বিবৃতির মাধ্যমে। বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
'গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা প্রদানপত্র' শিরোনামে এই বিবৃতিতে ইউনূস বলেছেন, "আমি আজ মে ১২, ২০১১ তারিখে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। গ্রামীণ ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব নূরজাহান বেগমকে আমি আমার দায়িত্ব প্রদান করছি।"
অথচ অনুমতি না নিয়ে পদে থাকার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নোবেলজয়ী ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হারতে হয় তাকে। সর্বশেষ গত ৫ মে আরো শুনানির জন্য ইউনূসের করা আবেদনও আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়।
ইউনূস স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, যতোদিন পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিচ্ছে, নূরজাহান বেগম ততোদিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও জানান, গ্রামীণ ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করার জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এ জন্য তিন মাসের মতো সময় লাগবে। তার আগ পর্যন্ত উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকই কাজ চালিয়ে যাবেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ উপলক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে 'ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে' নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার হয়। এতে গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল গ্রামীণ কল্যাণ নামে সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে। এরপরই গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে সরকার এই পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে।
পর্যালোচনা কমিটির তদন্ত চলাকালেই ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। হাইকোর্টের পর আপিল বিভাগও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মে মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান করার দাবি জানায় গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী সমিতি।
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মচারীরা কতোটা স্বাধীনভাবে এ দাবি করেছেন- সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মুহিত জানান, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আপাতত কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। তবে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আইনজীবীদের সঙ্গে বসবেন তিনি।
পদত্যাগের কারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে ইউনূস লিখেছেন, "আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো আমাদের হাতে আসেনি। আপিল আদালতে যে সমস্ত আইনগত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলিকে কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ না করে, শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না-হয় তা, এবং গ্রামীণ ব্যাংকে আমার ২৫ হাজার সহকর্মী, ৮৩ লাখ ঋণগ্রহীতা ও দরিদ্র মালিকগণ যাতে কোনোক্রমে দৈনন্দিন কাজে বাধাগ্রস্ত না-হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমি এ পদক্ষেপ গ্রহণ করলাম।"
অবশ্য গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যনের কাছে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কি না- সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করেননি ইউনূস।