বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়ে সংশয়

নানা কারণে সুন্দরবনের বাঘ এখন বিলুপ্তির পথে। আগামী একযুগে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও গ্লোবাল টাইগার ইনিসিয়েটিভ। কিন্তু এ নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রাণি বিশেষজ্ঞদের। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মঈনুল হক চৌধুরী।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2010, 10:57 PM
Updated : 28 July 2010, 10:57 PM

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া, বন উজাড়সহ নানা কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। সেইসঙ্গে খাদ্যাভাব, নির্বিচারে বন্যপ্রাণি নিধন, আবাসস্থল ধ্বংসে মানুষের প্রবণতায় গভীর সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

এ পরিস্থিতিতে ২০২২ সাল নাগাদ বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও গ্লোবাল টাইগার ইনিসিয়েটিভ নামের একটি সংস্থা।

বন ও প্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা ইতিবাচক হলেও, পরিবেশগত বিবেচনায় তা কতটা সম্ভব সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।

সুন্দরবনের আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে বাঘের ঘনত্ব পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক। বাঘ আছে বলেই সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষিত এবং প্রাণিদের খাদ্যচক্র টিকে আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বাঘের পদচিহ্নের (পাগমার্ক) উপর ভিত্তি করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই জরিপে দেখা যায়, বাঘের সংখ্যা ৪৪০। তার মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১ টি, মা বাঘিনী ২৯৮টি ও বাচ্চা ছিল ২১টি।

বন্য প্রাণি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গত একশ বছরে পৃথিবী থেকে প্রায় ৯৭ হাজার বাঘ হারিয়ে গেছে। বর্তমানে বেঁচে থাকা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাঘ হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় যে লাগবে না তা সহজেই অনুমান করা যায়।"

বন উজাড় ও বাঘ নিধনের ফলে বর্তমানে বিপন্ন প্রাণিদের তালিকায় বাঘ প্রথম দিকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রজাতিকে বাঁচানো না গেলে জীববৈচিত্র্যও রক্ষা করা যাবে না। রক্ষা পাবে না সুন্দরবন ও এর প্রাণিবৈচিত্র্য।

সরকারের বন্য প্রাণি বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "এক যুগ পরে বাঘের সংখ্যা বাড়ানো যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। বরং বর্তমান সংখ্যা টিকিয়ে রাখাটাই হবে চ্যালেঞ্জ। যেভাবে বাঘ হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে এ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত যদি বাঘ টিকিয়ে রাখা যায়-তাই হবে আশ্চর্যের বিষয়।"

বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসলাম বলেন, "যে হারে বাঘের প্রধান খাদ্য চিত্রা হরিণ কমে যাচ্ছে, তাতে বাঘ হারিয়ে যাওয়ার আগেই বিলুপ্ত হবে তাদের খাবার।"

সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণিদের মধ্যে চিত্রা হরিণ, শুকর, মায়া হরিণ ও বানর রয়েছে। এগুলোর সংখ্যাও কমছে দিনে দিনে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, পরিবেশ বিপর্যয়, লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়া, শিকারের অভাব ও সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে খাল-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ-মানুষে সংঘাত প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) তপন কুমার দে ২০০০-২০০২ সালে পিলেট গ্র"প কাউন্ট, ট্রান্জেক্ট কাউন্ট ও কম্প্লিট কাউন্ট পদ্ধতিতে নমুনা জরিপের মাধ্যমে সুন্দরবনে চিত্রা হরিণের সংখ্যা প্রায় ৮৩ হাজার বলে নিরূপণ করেন।

জরিপে দেখা যায়, নিবিড় সুন্দরী গাছ সমৃদ্ধ বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে হরিণের সংখ্যা ৩/৪টি। অন্যদিকে, সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের কেওড়া-গেওয়া-তৃণভূমি সমৃদ্ধ বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে হরিণের সংখ্যা ১৬০-১৭৫টি ।