অর্থ খরচে পর্যাপ্ত জনবল নেই জাতীয় জাদুঘরে : মহাপরিচালক

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ হওয়া অর্থ সঠিকভাবে খরচ করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল তাদের নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2019, 12:05 PM
Updated : 12 June 2019, 12:05 PM

বুধবার সকালে জাতীয় জাদুঘরে ‘গণশুনানি জাদুঘর পরিদর্শনে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় জাদুঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৩ কোটি টাকা।

রিয়াজ আহমেদ বলেন, “জাদুঘরের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। অর্থের সংকট রয়েছে আমাদের। তবে সত্যি কথা হল, অর্থ খরচ করার মতো ক্যাপাসিটি আমাদের নেই। ট্রেইনড ম্যানপাওয়ার আমাদের নেই। সেই সমস্যা উত্তরণের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।”

সম্প্রতি জাতীয় জাদুঘর ও জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর সমন্বিত ভবন নির্মাণে কাজ শুরু করেছে। তের তলা ভবনটি নির্মাণ হলে জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারির সংখ্যা ৪৫ থেকে ১০০টিতে উন্নীত করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক বলেন, “এতে আমাদের কাছে আরও যেসব নিদর্শন রয়েছে সেগুলোও আমরা প্রদর্শন করতে পারব। নতুন নতুন আরও সংগ্রহ আমরা উপস্থাপন করতে পারব।”

পাঁচ মাস আগে জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে এখন সেবার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান রিয়াজ আহমেদ।  

জাতীয় জাদুঘরে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে ৫ হাজার দর্শনার্থী আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জ্ঞানভিত্তিক, সংস্কৃতিবান্ধব মানুষ হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে হলে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে তাদের অহংবোধ তৈরি করতে হবে। তখনই তারা জাদুঘর দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।”

জাতীয় জাদুঘরের সমকালীন শিল্পকলা বিভাগের রক্ষক বিজয় কৃষ্ণ বণিক জানান, জাতীয় জাদুঘরে এখন প্রায় এক লাখ নিদর্শন রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার নিদর্শন প্রদর্শন করা হচ্ছে।

“আমরা মনে করি, একটি রুমে গাদাগাদি করে এত ডিসপ্লে হওয়া ঠিক না। আবার এত নিদর্শনের মধ্যে যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোই আমরা প্রদর্শন করি। অনেক নিদর্শন পারিবারিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। আমাদের পরিকল্পনায় জেলা জাদুঘরের কথা রয়েছে। সেখানেও যদি সেসব নিদর্শন ডিসপ্লে করি তাহলে শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পাবে।”

সভায় বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ বলেন, “সংস্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে জাতি গঠনে যারা বিভিন্ন সময়ে অবদান রেখেছেন, তাদের কিছু কিছু স্মৃতিচিহ্ন মিনিয়েচার স্কেলে হলেও জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হওয়া দরকার। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসব সেনা এখানে জীবন দিয়েছেন, তাদের কথাও থাকা দরকার কৃতজ্ঞতা হিসেবে।”

বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় জাদুঘর সফরে আসেন। তাদের সামনে বাংলাদেশের ইতিহাস উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রশিক্ষিত  কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিপ্রা সরকার মনে করেন, শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন প্রদর্শনে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বাড়াতে হবে গবেষণাও।

তিনি বলেন, “বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সময় কীভাবে বদলে গেল এখানে সে বিষয়ে গবেষণাও হওয়া দরকার। অনেকের কাছে অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে, সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত না করে জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে আসা দরকার। লাইব্রেরিতে প্রাচীন পুঁথির অনেক কালেকশন আছে। সেগুলো যেন গবেষকরা আরও সহজে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা থাকা উচিৎ।”

এছাড়াও সভায় কথা বলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ শাহরিয়ার, ছড়াকার আসলাম সানী।