ভিকারুননিসার ‘থলের বিড়াল’

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার পর ছয় দশক পুরনো রাজধানীর নামি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার নানা অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসছে।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 06:35 PM
Updated : 7 Dec 2018, 10:20 AM

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি বেসরকারি এই বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদ ও প্রশাসনের যে সব অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে, সেখানকার কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকের কথায়ও তার সায় মিলেছে।

অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য দিলেও তাদের বেশিরভাগই নাম প্রকাশ করতে চাননি।

তবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের প্রধান গোলাম আশরাফ তালুকদার দাবি করেছেন, তারা সব কাজ আইনের ভেতরে থেকেই করেছেন।

‘অপমানের শিকার’ হয়ে শিক্ষার্থী অরিত্রীর আত্মহননের দুদিন পর বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির উপাত্তের বরাতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, ভিকারুননিসার যে চেহারা প্রকাশিত হয়েছে তা মানুষের দৃষ্টি খুলে দেবে।

“থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।… এর আসল চেহারাটা উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা এই চেহারাটা খুলে দেব।”

১৯৫২ সালের ১৪ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ফিরোজ খান নূনের স্ত্রী ভিকারুননিসা নূনের উদ্যোগে ঢাকার বেইলি রোডে যাত্রা শুরু করে বিদ্যালয়টি।

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ধারাবাহিকভাবে ঈর্ষণীয় ফলাফল দেখিয়ে আসা মেয়েদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি; বেইলি রোড ছাড়িয়ে কয়েকটি স্থানে আলাদা ক্যাম্পাসও হয়েছে।

বেইলি রোডের প্রধান শাখার নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী গত সোমবার আত্মহত্যা করার পর একদল শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আন্দোলনে নামলে ভিকারুননিসার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন অনেকে।

অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার সময় অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে ‘অপমান করেছিলেন’ অধ্যক্ষ। সে কারণে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেন।

তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রী রোববার বার্ষিক পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকলসহ ধরা পড়েছিলেন।

অরিত্রী অধিকারী; তার আত্মহত্যার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভিকারুননিসা

ওই ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার দুটি তদন্ত কমিটি করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার বুধবার সাংবাদিকদের সামনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী।

ওই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ওখানে বহুদিন ধরে অধ্যক্ষ নেই, একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও তারা নিয়ম অনুসরণ করে অধ্যক্ষ নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়নি, এটাও একটা বড় ধরনের অনিয়ম।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিকারুননিসায় ২০১১ সালের পর জুলাইয়ের পর থেকে তিনজন অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করলেও তাদের সবাই ছিলেন ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে।

ওই বছরের ১৩ জুলাই শিক্ষক পরিমল জয়ধর কর্তৃক ‘ধর্ষণের’ পর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অধ্যক্ষের পদ ছাড়তে হয়েছিল হোসনে আরা বেগমকে।

তারপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বে এসে ভারপ্রাপ্ত অবস্থায়েই ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর অবসরে যান মঞ্জু আরা বেগম। এরপর পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপরই দায়িত্ব ভরসা রাখে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ।

সে বছরের ১২ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবেই ২০১৭ সালের ৩ জুলাই অবসরে যান শিক্ষক সুফিয়া খাতুন।

তারপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান নাজনীন ফেরদৌস; যাকে অরিত্রীর মৃত্যুর পর আন্দোলনের মুখে বুধবার বরখাস্ত করে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ। তাকেসহ তিন শিক্ষককে আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেছেন অরিত্রীর বাবা, সেই মামলায় এক শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার ওই স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

প্রতিষ্ঠানের উপর ‘খবরদারি’ করার স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ করা হয় না বলে অভিযোগ করেন ভিকারুননিসার একজন শিক্ষক।

নাম প্রকাশ না করে ওই শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে গভর্নিং বডিই সব। তাদের কথামতো চলার জন্য অধ্যক্ষকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবেই দায়িত্ব রাখা হয়।”

ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের ব্যাপক অর্থ ছড়ানোর বিষয়টি বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে।  

নাজনীন ফেরদৌস ১৯৯০ সাল থেকে ভিকারুননিসায় শিক্ষকতা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিসংখ্যান বিভাগের এই প্রধানের বিরুদ্ধে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করার অভিযোগ উঠে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে।

বিধিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এরপর সেটা অনুমোদন দেয় শিক্ষা বোর্ড। অধ্যক্ষ পদাধিকারবলে থাকেন গভর্নিং বডির সদস্য সচিব পদে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও শাখা প্রধান (শিফট ইনচার্জ) অভিভাবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সদাচরণ করেন না।

শিক্ষামন্ত্রীকে পেয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা

“হঠাৎ সাক্ষাতের সুযোগ হলেও তারা অভিভাবকদের সঙ্গে চরম অশোভন আচরণ করেন বলে তদন্তকালে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কাউন্সেলিং বা মতবিনিময় না করে কথা কথায় টিসি দেওয়ার ভয় দেখান।”

এ প্রসঙ্গে অভিভাবক দিলারা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাজনীন ম্যাডামের দেখা পাওয়া যেত না একদমই। গভর্নিং বডির সঙ্গে মিলে তিনি যা ইচ্ছা তাই করতেন। তবে সুফিয়া খাতুন বেশ কো-অপারেটিভ ছিলেন।”

গভর্নিং বডি বা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিষয়ে অভিভাবকরা কথা বললেও নানা ধরনের হুমকি-ধমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেন অভিভাবক দিলারা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান গোলাম আশরাফ বলেন, “যা করা হয়েছে, আইনের মধ্য থেকেই করা হয়েছে। আমরাও ভারপ্রাপ্তকে ভারমুক্ত করার চেষ্টা করেছি।”

“আমাদের আগেও তো ভারপ্রাপ্ত ছিল,” বলেন তিনি।

অতিরিক্ত শিক্ষার্থী, বর্ধিত ফি

ভিকারুননিসার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলে সেখানে যায় পুলিশ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় লটারির বাইরেও শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ করে আসছেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

“দেখা যাচ্ছে যা অনুমতি পায়, তার চেয়ে বেশি ভর্তি করে ফেলে। তার মানে অন্য কোনো পথে করে, হয়ে যায়,” মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

ভিকারুননিসায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ঢোকার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যে। সরকারি নীতিমালার বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রমাণ যেখানে স্পষ্ট।

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা-২০১১ অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র ও শিক্ষকের অনুপাত হবে ৩০:১। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে একক শ্রেণি বা শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫০ জন।

তবে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ এর অধিক হলে পরবর্তী ৪০ জনের জন্য দ্বিতীয় শাখা খোলা যাবে। তৃতীয় বা পরবর্তী প্রতি শাখার জন্য পূর্ববর্তী শাখায় ৫০জন পূর্ণ হতে হতে হবে। প্রতি শাখায় একজন করে হিসাব করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

এক অভিভাবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ‘বি’ শাখায় ও সপ্তম শ্রেণির ‘এ’ শাখায় পড়ে তার দুই মেয়ে। চতুর্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৮ জন আর সপ্তম শ্রেণিতে ৮৩ জন।

“৫০ জনের জায়গায় ৬০ জন হতে পারে। কিন্তু এখানে প্রতিটি ক্লাসেই এই রকম বেশি বেশি শিক্ষার্থী। এক ক্লাসে এত শিক্ষার্থী হলে তারা বুঝবেটা কী?”

বোর্ডের নির্ধারিত ফি’র বাইরে ভর্তির শুরুতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করলেও পরে বিভিন্ন নামে সেটা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

একজন অভিভাবক জানান, জানুয়ারি মাসে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সময় সরকার নির্ধারিত ৮ হাজার টাকা এবং মাসের বেতন ১ হাজার ১০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি-মার্চের বেতনের ২ হাজার ২০০ টাকা বেতনের সঙ্গে উন্নয়ন ফিসহ বিভিন্ন নামে কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কোচিং না করলে ফেল!

সহপাঠির আত্মহত্যায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল আরও নানা অভিযোগ

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ভিকারুননিসায় শিক্ষকদের কাছে কোচিং করা অলিখিতভাবে বাধ্যতামূলক। প্রায় সব বিষয়েই কোচিং করানো হয় সেখানে। সে কারণে শুক্রবার ছুটির দিনেও পুরো ক্যাম্পাস থাকে সরগরম।

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বিষয় একসঙ্গে করে কোচিং করানো হয় ১ হাজার ২০০ টাকা ফিতে। প্রতি ব্যাচে শিক্ষার্থী নেওয়া হয় ৪০জন করে।

কোচিংয়ে না গেলে ফেল করানোর অভিযোগ আছে ভিকারুননিসার কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের এক শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেই অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন কয়েকজন অভিভাবক।

নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা সাহানা বেগম বলেন, “ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিয়ে আসে আর দোয়া করে, আল্লাহ … স্যারের কাছে যেন খাতা না যায়। কোচিং যারা করে না, তাদেরকে ফেল করে করিয়ে দেওয়া হয়। সে কারণে সবাই কোচিং করতে বাধ্য হয়।”

অভিভাবক দিলারা চৌধুরী বলেন, “কোচিংয়েই যদি ৪০ জন করে ছাত্রী থাকে, তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? ফলে কোচিং করালেও সিলেবাস সম্পূর্ণ না করে পরীক্ষায় বসিয়ে দেওয়া হয়।”

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার আসামি হিসেবে তাকে খোঁজা হচ্ছে বলে পুলিশ ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

এখন আর সেরা হয় না

অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার স্কুলের সামনে বিক্ষোভে সহপাঠীরা

এক সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে ধারাবাহিকভাবে প্রথম হলেও সেই অবস্থান গত কয়েকবছর ধরে রাখতে পারেনি ভিকারুননিসা।

২০১৪ সালের এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে ভিকারুননিসা তৃতীয় হয়েছিল। ২০১৫ সালে সেটা নামে চতুর্থ অবস্থানে। ২০১৪ সালে ঢাকা বোর্ডে এইচএসসিতে পঞ্চম অবস্থানে ছিল।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সেরা ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ভিকারুননিসার কেউই ছিল না। যেখানে প্রথম হয়েছিল শ্যামপুরের এ কে স্কুলের এক শিক্ষার্থী। এইচএসসিতে সেরা ১০ এর মধ্যে কেবল সপ্তম স্থান ছিল ভিকারুননিসার এক শিক্ষার্থীর।

এক সময় দেশ সেরা হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের মানে অবনমনের বিষয়ে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তিনি শুধু বলেন, “মেয়েদের মধ্যে আমাদের এখান থেকে প্রথম হয়েছে।”

কোচিংয়ের প্রতি শিক্ষকদের ঝোঁক এবং অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমন ‘অবনমন’ কি না- প্রশ্ন করা হলে মুশতারি সুলতানা বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক না। আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে বড়জোর ২ থেকে ৫ শতাংশ কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত।”

যা বললেন পরিচালনা পর্ষদ প্রধান

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার।

ভিকারুননিসায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গভর্নিং বডির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।

শিক্ষামন্ত্রীর ওইসব বক্তব্যের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান অরিত্রীর মৃত্যুর পর স্কুল কর্তৃপক্ষের করা কমিটির প্রতিবেদনে আসবে বলে জানান স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড তদন্ত করেছে। তাদের তদন্ত নিশ্চয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত। তারা বলবে আমরা সেটা মানব।”

স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদে স্থানীয় এমপির সভাপতি পদে মনোনীত হওয়ার পথ বন্ধ করে ২০১৬ সালে জুনে রায় আসে সর্বোচ্চ আদালত থেকে। ভিকারুননিসার কয়েকজন অভিভাবকের রিট আবেদনে ওই রায় আসে।

এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্বাচিত হন গোলাম আশরাফ তালুকদার। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

দীর্ঘদিনের অনিয়মের যে মন্তব্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এসেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে গোলাম আশরাফ বলেন, “সে বিষয়ে আমরা আমাদের তদন্ত রিপোর্টে বলব। তদন্ত কমিটি হয়েছে তাদের প্রতিবেদন দ্রুতই পাব।”