‘প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছিলেন দ্বিজেন শর্মা’

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বিচ্ছিন্নতায় হারাতে বসা সবুজ শ্যামলিমাকে আবারও ফিরিয়ে আনতে ‘নিসর্গসখা’ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা জীবনভর সাধনা করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2017, 08:24 PM
Updated : 25 Sept 2017, 08:24 PM

সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে দ্বিজেন শর্মা স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।

এতে সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি আনিসুজ্জামান বলেন, “দ্বিজেন শর্মা প্রকৃতিপ্রেমী ছিলেন। তার সেই পরিচয়ে তাকে পুরোপুরিভাবে চেনা যায় না। তার সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের প্রত্যেককে তিনি প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন, সচেতন করেছেন। তিনি প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছিলেন।”

দ্বিজেন শর্মা এক ‘ন্যায়পরায়ণ’ সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি তার কর্ম, গ্রন্থাবলি রেখে গেছেন। আমরা তা থেকে প্রেরণা নিয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।”

বাংলা একাডেমির এই আয়োজনে সহযোগিতা করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, ডিসকাশন প্রজেক্ট, তরুপল্লব, নটরডেম নেচার স্টাডিজ ক্লাব, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও অভিযাত্রী।

প্রকৃতি বিষয়ক লেখক মোকাররম হোসেন দ্বিজেন শর্মার জীবনী পাঠ শেষে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) দ্বিজেন শর্মার নামে নামকরণ করার প্রস্তাব রাখেন।

আয়োজনের শুরুতে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন নির্মিত দ্বিজেন শর্মার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর তার আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ও ‘আয় আমাদের অঙ্গণে’ গান দুটি।

দ্বিজেন শর্মার স্ত্রী দেবী শর্মা বলেন, “বড়লেখার কাঠালতলিতে তার জন্মস্থানে নাগেশ্বরী গাছের তলায় তার চিতাভষ্ম, পরিধেয় থেকে সব কিছু সমাহিত করেছি। আমার শাশুরি মগ্নময়ী দেবীর কোলে তিনি সমাহিত হলেন, তার জীবনবৃত্ত পূরণ হল।”

কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বলেন, “তিনি আমার পরিবারের একটি অংশ ছিলেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে তার জীবনের গভীর সম্পর্ক আর চিন্তার বিন্যাস সব সময় অনুসরণীয়  “

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “জীবনের বহুমাত্রিকতা আমরা দেখেছি। নিসর্গবিদ, লেখক, শিক্ষকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে কোনো একটিতে যদি কোনো মানুষ শীর্ষে উঠতে পারেন, তাকে আমরা গুণী মানুষ বলি। তিনি নিভৃতে সব অঙ্গণে কাজ করে শীর্ষে গেছেন, তাকে কী বলে অভিহিত করা যেতে পারে, তা আমার জানা নেই।”

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, “তিনি আমার শিক্ষক, গুরু। ছাত্র হিসেবে কতটুকু শিখেছি জানি না, তবে প্রকৃতির বিষয়ে যতটুকু শিখেছি, তার পুরোটুকুই তার কাছ থেকে শিখেছি। তিনি নিজেই ছিলেন একটা বটগাছ, সে ছায়া এখন সরে গেছে। সে অভাব কখনো পূরণ হওয়ার নয়।”

পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, “শ্যামলী নিসর্গ নির্মাণে তিনি নান্দনিকতার আশ্রয়সন্ধানী হয়ে সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা বলে গেছেন।”

এছাড়াও তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদ্দী, এভারেস্টবিজয়ী নিশাত মজুমদার।

দ্বিজেন শর্মা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।