মনে হচ্ছে, ‘যৌথ প্রযোজনার’ কাজ চলছে: রিজভী

শেখ হাসিনাকে হত্যার ‘ব্যর্থ চেষ্টা’এবং তাতে বিএনপিকে জড়িয়ে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে খবরের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2017, 12:05 PM
Updated : 25 Sept 2017, 12:05 PM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিদেশি একজন সাংবাদিক, তার তোড়জোড়, তার কথা-বার্তা, তার আর্টিক্যাল লেখা, সব কিছুতে মনে হচ্ছে, একটা যৌথ প্রযোজনায় কোনো কিছুর কাজ হচ্ছে।”

সম্প্রতি মিয়ানমারের ইন্টারনেট সংবাদপত্র মিজিমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলার একটি ব্যর্থ চেষ্টার খবর আসে, যা পরে ভারতের সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার ও প্রকাশ হয়। তার সূত্র ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি আসে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এই ধরনের খবর ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই প্রতিবেদনটি যিনি করেছেন, সেই সুবীর ভৌমিকের বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান রিজভী।

“এত বড় দুঃসাহস তার হয় কী করে যে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে নোংরা কথা বলতে পারেন। আপনারা দেখেছেন, কী জঘন্যভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যা কাহিনী রচনা, রূপকথা রচনা করে একের পর এক ওয়েবসাইটে বা বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন অথবা আর্টিক্যাল লিখছেন।”

এটা বিএনপির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চালানো ‘অপপ্রচারের’ অংশ বলে দাবি করেন রিজভী।

“এই ধরনের ঘৃণ্য অপপ্রচার একটা গভীর ষড়যন্ত্র। এর সাথে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা জড়িত। এই চক্রান্ত রোখার জন্য আমি দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা বলেন, “তাহলে এটা নিশ্চিত যে কাজগুলো যারা করছেন তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছেন, একটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করছেন সুবীর ভৌমিকসহ অন্যান্যরা।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খবরটি নাকচ করার আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভিন্ন রকম বক্তব্যে সরকারের স্ববিরোধিতার প্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভয়েস অব আমেরিকার’র কাছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা ‘হাস্যকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “এটি হাস্যকর ও ধাপ্পাবাজিমূলক বক্তব্য বলে মানুষ গণ্য করেছে। ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত তাদের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোই ছিল নিখুঁত সরকারি সন্ত্রাসনির্ভর। বির্তকিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে করা হয়েছে সরকারের রাবারস্ট্যাম্প।”

রোববার চট্টগ্রামের নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার উপজেলার খায়েরা ইউনিয়ন, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ও রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গেছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

গত ২২ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরীর উপর হামলা এবং ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল-যুবদল-জাসাস-ছাত্রদল-বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান রিজভী।

নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ার‌ম্যান শওকত মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

প্রসূতি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার দাবি

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রসূতি মায়েদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি জানান রিজভী।

উখিয়ার শরণার্থী শিবির ঘুরে আসার অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, “সবচাইতে বড় যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, সেটি হল প্রসূতি মায়ের সুরক্ষার ব্যবস্থার প্রচণ্ড অভাব।

“লোকচক্ষুর অন্তরালে যেটি হওয়ার কথা, সেখানে পর্যাপ্ত আড়াল দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় এটি এক বীভৎস রূপ নিয়েছে। যেন মনে হয় মনুষ্যত্ব কাদায় লুটোপুটি করছে। সন্তানসম্ভবা নারী ও প্রসূতি মায়ের প্রটেকশনের কোনো ব্যবস্থা সেখানে নেই।”

রোহিঙ্গাদের রোদ-বৃষ্টিতে কষ্টের কথাও বলেন রিজভী।

“এখনও পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। দিশেহারা রোহিঙ্গা ছুটাছুটি করছে। এখন যেটি অত্যন্ত প্রয়োজন সেটি হলো বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।”

তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়া শুরু করেছে বলে মনে কেরেন তিনি।

রিজভী জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকটি টিউবওয়েল বসানো এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।