জলরঙে প্রকৃতির রূপ

কোনোটিতে ভোরে নদী পাড়ের স্নিগ্ধতার ছোঁয়া, কোনোটিতে গোধূলির আলো-আঁধারির খেলা; পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের সরু রাস্তায় আদি যানবাহনের ছুটে চলা যেমন আছে, তেমনি আছে ভারতের জয়সালমিরের আদি কোনো নিবাসের চিত্রও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2017, 04:52 PM
Updated : 22 Sept 2017, 05:28 PM

জলরঙে আঁকা এই রকম অনেক চিত্রকর্মে নানা সময়-স্থানের প্রকৃতিকে তুলে এনেছেন শিল্পী শাহনুর মামুন; সে সবের ৬৮টি চিত্রকর্ম নিয়ে শুক্রবার থেকে উত্তরার গ্যালারি কায়ায় শুরু হয়েছে তার একক চিত্র প্রদর্শনী।

সন্ধ্যায় ‘স্টোরিজ ফ্রম নেচার’ শিরোনামের এই চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্থপতি ও শিল্প সমালোচক রবিউল হুসাইন।

চিত্রকর্মগুলোর মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, “এখন যে প্রকৃতির মধ্যে বাস করি, তার অনুভূতিকে তুলে নিয়ে আমরা যখন এমন প্রদর্শনীতে আসি তখন মনে হয় যে, প্রকৃতির রূপকে তুলে ধরে চলছে। আমার মনে হয়, বাইরের সঙ্গে ভেতরের একটা যোগসূত্র এখানে তৈরি হয়েছে।

“রঙের ব্যবহার, যে জিনিসটাকে দেখছি সেটা হুবহু তুলে নিয়ে আসার শৈল্পিক ক্ষমতা এখানে দেখেছি।”

স্থায়িত্বের কারণে জলরঙের চেয়ে তেল রঙের চিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাংলার ষড়ঋতুর প্রকৃতিকে ‘প্রাণবন্তভাবে’ তুলে আনতে জলরঙ গুরুত্ব বহন করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“এই দেশের ছবির ক্ষেত্রে আসল রূপটা হলো জলরঙ। জলরঙের মাধ্যমে আমাদের দেশকে এমন প্রাণবন্তভাবে তুলে আনা যায়, সেটা তেলরঙে পারা যায় না।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রকৃতির গল্প তুলে আনার গল্প বলতে ভোলেননি শিল্পী শাহনুর মামুন; বললেন, নিজের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রকৃতির অনুভূতিকে তুলে আনতে ছবি আঁকেন তিনি।

তরুণ এই শিল্পী বলেন, “আমি বিশাল পোর্টফোলিও সঙ্গে করে যখন নিয়ে যাই, তখন কিন্তু শুধু ছবি আঁকার জন্য যাই না। এটা আমার ভালো লাগা থেকে, অথবা প্রকৃতি আমাকে টানে। প্রকৃতির যে রঙের ট্রিটমেন্ট, আলো ছায়ার খেলা, আমাদের যে জীব বৈচিত্র্য, রঙের যে বৈচিত্র্য-এখানে বর্ষা আসে, শীত আসে, গ্রীষ্ম আসে। বৃষ্টির দিনে ঝিরঝিরি বৃষ্টি হয়, আবার দমকা হাওয়া তা তাড়িয়ে নিয়ে যায়।”

সেই প্রকৃতিকে তুলে আনতে জলরঙকেই উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা জানিয়ে শাহনুর মামুন বলেন, “আমি যে জলরঙ করছি, সেটা শৈশব থেকে শুরু। প্রকৃতি দেখে, প্রকৃতির কাছে গিয়ে আমার ভেতরে একটা প্রকৃতির জন্ম হয়েছে। আমার ভেতরের প্রকৃতি এবং বাস্তবতার প্রকৃতির মিশেলে একটা অনুভূতি তৈরি হয়। আমার যেটা ভালো লাগে সেটা আঁকার চেষ্টা করি।”

জলরঙটা নিজের ‘মেজাজের সঙ্গে যায়’ উল্লেখ করে শিল্পী বলেন, “জলরঙের যে স্বচ্ছতার ব্যাপার, খুব সহজে শিল্পকে ধরা যায়, একটা সময়কে ধরা যায়, সূর্যর আলো যদি ভোরে ধরতে যাই, সেটা পরিবর্তিত হয় দ্রুত, সেই সময়ে আমার ইমোশনও পরিবর্তন হয়। এই যে বিষয়টা, সেটাকে আমি ম্যাজিকের মতো করার চেষ্টা করি।”

শাহনুরের চিত্রকর্ম দেখতে আসেন টালিগঞ্জের অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।

পরমব্রত বলেন, “আমরা যান্ত্রিক মাধ্যমে কাজ করি। কিন্তু আমাদের আসলে গোড়ার দিকে ফিরে যেতে হয়। সেই গোড়ার দিকে ফিরে যাওয়ার মাধ্যম চিত্রকর্ম, বইমেলাসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ। এই প্রদর্শনীতে এসে সেই গোড়ার দিকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে।”

গ্যালারি কায়া’র পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, তরুণ শিল্পীদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে ১৪ বছর ধরে কাজ এগিয়ে চলেছেন তারা। তরুণ শিল্পী শাহনুর মামুনের একক প্রদর্শনীও তেমনি। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে।

বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে’র কান্ট্রি হেড সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর স্পন্সর করছে এডিএন গ্রুপ। মিডিয়া পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং অনলাইন পার্টনার অ্যার্টিচুড ডটকম।