শুক্রবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু তাদের আমরা রাখতে পারব না; তা সম্ভবও না। কোনো দেশেই সম্ভব হবে না।
“জাতিসংঘ থেকে মিয়ানমারের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে করে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করতে বাধ্য হয়। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না। আমরা কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে এ সমস্যার সমাধান চাই।”
গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে রাজ্যের কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও এক সেনা ক্যাম্পে বিদ্রোহীদের হামলার পর পাল্টা সেনা অভিযানে দমন-পীড়ন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমার সেনাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ চালানোর অভিযোগ এলেও রাখাইনে সহিংসতার জন্য বিদ্রোহীদের দায়ী করছে অং সান সু চির সরকার।
সাধারণ রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হলেও বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে আশ্রয়- প্রশ্রয় দেয় না বলছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম।
মিয়ানমারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে প্রশ্রয় বা আশ্রয় দেয় না, সেটা ভারতের বিচ্ছিন্নবাদী হোক আর মিয়ানমারের হোক। আপনাদের দেশের ভেতরের সমস্যা আপনারা আলোচনা করে সমাধান করেন।
“অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ নাক গলাবে না। তার মানে এই নয় যে নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার করবেন, তাদের হত্যা করবেন। যারা হাজার বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছে। কী মর্মান্তিক ঘটনা সেখানে।”
মিয়ানমার সরকারের অবহেলার কারণে রাখাইন রাজ্যে কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই মন্তব্য করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সেখানকার নারীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত নয়। যেখানে মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেখানের মহিলারা জানে না কীভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
“কোনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রাখাইনে নেই। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আফ্রিকান দেশগুলোতেও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মিয়ানমারের মতো অঢেল সম্পদের দেশের একটি অঞ্চলের মেয়েরা জানে না কীভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।”
নাসিম বলেন, “মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার গর্ভবতী মহিলারা বাংলাদেশে এসেছে। এখানে গতকাল পর্যন্ত ২০০ মা তাদের বাচ্চা প্রসব করেছে। আমাদের চিকিৎসকরা অস্থির হয়ে গেছে। কোন যুগে আমরা বাস করি।”
শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনিহার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “সম্পদশালী দেশগুলো পর্যন্ত হাজার হাজার শরণার্থী নিতে সাহস পায় না, তারা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় না।
“কিন্তু আমাদের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সাহস দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন তাদেরকে খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ১২টি মেডিকেল টিম সেখানে কাজ করছে। নারী, শিশু ও অন্যান্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেটা আমরা চালিয়ে যাব।”
দেশের চিসিৎসা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ইস্যুতে বাংলাদেশের মানুষ এক হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বাইরেও বিএনপি সেই বিষয়ে কথা বলছে, জাতীয় পার্টি সাহায্য করছে। গণফোরামসহ অন্যান্যরাও রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার কথা বলছে।
“আমরা সবাই বলছি, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন। উনি উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই আজকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত রিঅ্যাক্ট করেছে। ইউরোপের সবগুলো দেশ... ব্রিটেনসহ সবাই মিয়ানমারের সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলছে।”
বাংলাদেশ সোসাইটি অব আল্ট্রাসনোগ্রাফির ২৯তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম।
তিনি বলেন, “সব কিছুতেই প্রশিক্ষণের ব্যাপার রয়েছে। দেশে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে, একইভাবে মেডিকেল টেকনিশিয়ানদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
“অনেক সময় দেখা যায়, প্রশিক্ষণের অভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুর্ভোগ ঘটে, রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভুল রোগ নির্ণয়ের ফলে চিকিৎসকরাও যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারেন না। এই ব্যাপারে আপনারা যে দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন, তা সঠিকভাবে করবেন।”
বাংলাদেশ সোসাইটি অব আল্ট্রাসনোগ্রাফির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মিজানুল হাসানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।
সম্মেলনে আয়াজক প্রতিষ্ঠানে মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া চট্টগ্রামের ইউএসটিসির ইনস্টিটিউট অব আল্ট্রাসাউন্ড ইন মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চর পরিচালক অধ্যাপক কানু বালা বক্তব্য দেন।