এছাড়া পরীক্ষার আগের রাতে জালিয়াত চক্রের সদস্য সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বাইরের ৭০টি কেন্দ্রে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয়। কলা অনুষদের অধীন এই ইউনিটের ২ হাজার ৩৬৩ আসনের বিপরীতে এবার আবেদনকারী ছিলেন ৩২ হাজার ৭৪৯ জন।
পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহজাহান আলী ওরফে রেজাকে এক ভর্তিচ্ছুর হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় আটক করেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা।
আর যার হয়ে তিনি ‘প্রক্সি’ দিচ্ছিলেন, সেই তানসেন মিয়াকেও পরে সাংবাদিকদের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আটক করা হয়।
শাহজাহান মাস্টার দা সূর্যসেন হলের ১৭১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। আর ভর্তিচ্ছু তানসেন নরসিংদীর শিবপুর থানার সাদেক মিয়ার ছেলে। চলতি বছর ঢাকা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তিনি।
“ছবি আর চেহারার ভিন্নতা স্পষ্ট হলেও সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দিই। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগেই সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন আমরা তাকে ধরে ফেলি।”
শাহজাহানকে প্রক্টরের কক্ষে আনার পর উপস্থিত সাংবাদিকরা তার মাধ্যমে তানসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তানসেন ফোন ধরলে তাকে অপরাজেয় বাংলার কাছে আসতে বলা হয়।
তানসেন ও তার সঙ্গে থাকা বড়ভাই কাউসার মিয়া বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দৌড় দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের দুই সদস্য পরে সাংবাদিকদের সহায়তায় তাদের ধরে ফেলেন।
প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, ওই সময় আজিমপুরের এক মেসে নাদিম নামে নরসিংদীর একজন ছিলেন যিনি তানসেন ও শাহজাহানের মধ্যস্থতাকারী। কিন্তু তাকে ধরা যায়নি।
“জিজ্ঞাসাবাদে তানসেন বলেছে, সাড়ে তিন লাখ টাকার চুক্তিতে শাহজাহান তার হয়ে প্রক্সি দিতে রাজি হয়,” বলেন প্রক্টর।
এদিকে প্রক্টর অফিসে বসেই শাহজাহান দাবি করেন, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে টাকার জন্য তিনি এ কাজ করেছেন।
প্রক্টর জানান, এই জালিয়াতির সঙ্গে তানসেনের বড় ভাই কাউসার মিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুজনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জালিয়াতি ঠেকাতে আগের বছরের মত এবারওপরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা টেলিযোগাযোগ করা যায় এমন যে কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বা যন্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে করেছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রের বাইরে থাকছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সকালে কলাভাবন কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যে কেন্দ্রগুলো আছে সেগুলো আমি পরিদর্শন করেছি।... গত রাতে সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে আটক করেছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভর্তির ক্ষেত্রে সমন্বিত গুচ্ছ পরীক্ষার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করবে কি না জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি এতোটাই সুগঠিত, এতোই বিশ্বস্ত, এতোই প্রশংসিত যে আমরা আপাতত পরিবর্তন চাচ্ছি না। তবে কোনো কিছু যদি পরিবর্তন করতে হয় সেটা গভীর বিশ্লেষণ এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে করা হবে।”