পূজার টাকার ‘অংশ যাবে’ রোহিঙ্গাদের সহায়তায়

জাতিগত সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যয় কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2017, 09:52 AM
Updated : 22 Sept 2017, 10:07 AM

শুক্রবার সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  এ সিদ্ধান্তের কথা জানান পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে এক ভয়াবহ অমানবিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দুর্গাপূজায় উৎসবের খরচ কমিয়ে শরণার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে যাব।”

পরিষদের এ সিদ্ধান্তের কথা সারা দেশের পূজা কমিটিগুলোকে জানানো হয়েছে বলছেন তাপস কুমার।

এর আগে জঙ্গি তৎপরতা ও সারা দেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষাপট দুর্গোৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট।

গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, মাগুরা ও কুষ্টিয়ায় প্রতিমা ভাংচুরের খবর জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলছেন, তারা দেশের সব পূজামণ্ডপকে অধিকতর সতর্ক ও সংযত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প

গত ১৫ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদের এক সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। কিন্তু তারপরও পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল খুলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। 

তাপস কুমার পাল জানান, তারা নিরাপত্তা ইস্যুতে করণীয় সম্পর্কে ইতোমধ্যে জেলা কমিটিগুলোর নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এবার সারা দেশে পূজার সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৭টি, ঢাকায় হবে ২৩১টি মণ্ডপ।

লিখিত বক্তব্যে তাপস কুমার পাল অভিযোগ করেন, দুই ‍তৃতীয়াংশ দেবোত্তর সম্পত্তি জবরদখল করায় ঢাকেশ্বরী ও রমনা মন্দিরে ঢোকার পথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে। পূজায় নিরাপত্তা ঝুঁকিরও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, “দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছিল, তা ছিল আমাদের স্বার্থপরিপন্থি। পরে আমাদের দাবির মুখে তা স্থগিত হলেও চাহিদা অনুযায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন এখনও প্রণয়ণ করা হয়নি। হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠনের দাবিও পূরণ করেনি সরকার।”

এবার দুর্গোৎসব চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানিয়ে তাপস বলেন, “আমাদের দাবি থাকবে, দুর্গাপূজাতে যেন কোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া না হয়।”

তিনি জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হবে সারা দেশে।

পরে পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন তাপস কুমার পার।

এসব দাবির মধ্যে শারদীয় দুর্গোৎসবে তিনদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা, দুর্গোৎসবে বঙ্গভবন, গণভবন ও নগর ভবনসহ জেলা পর্যায়ে সরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা, দেশের সব কারাগারে উন্নত খাবার পরিবেশন, ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাতিল করে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন, উৎসব চলাকাল স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং পূজামণ্ডপে নিরবচ্ছিন্ন পানি, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানীয়জলের বন্দোবস্ত করা রয়েছে।

তিথি অনুযায়ী, ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসব। ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে উৎসব শেষ হবে।

এবার দেবী আসছেন নৌকায়, যাবেন ঘোটকে।

পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু বলেন, দুটোতেই পৃথিবীর অকল্যাণ। নৌকায় আসা মানেই তো ঝড়-জলের প্রকোপ। আর ঘোটকে চড়ে গেলে দেখা দেবে খরা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মহানগর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।