চালকদের নামে ৫০০০ অটোরিকশার খবর নেই

যাত্রী হয়রানি কমাতে রাজধানীতে চালকদের নামে অটোরিকশা বরাদ্দের যে ঘোষণা সরকার দিয়েছিল, তার বাস্তবায়ন হয়নি দশ বছরেও।  

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2017, 03:51 AM
Updated : 22 Sept 2017, 03:51 AM

চালকদের অভিযোগ, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গড়িমসিতে তাদের অটোরিকশার বরাদ্দ আটকে আছে।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৮ জুন তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পাঁচ হাজার অটোরিকশা চালকদের নামে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

অটোরিকশা মালিকদের সংগঠন সে সময় উচ্চ আদালতে গেলে সরকারের ওই উদ্যোগ আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ২০১৩ সালে মালিকদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

আদালতের আদেশের পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চালকদের নামে অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশ দেন।

বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠি চালাচালি শেষে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিআরটিএ চালকদের নামে অটোরিকশা বরাদ্দের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

কিন্তু এরপর মন্ত্রণালয় ওই প্রস্তাবের বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় পাঁচ হাজার অটোরিকশা চালকদের নামে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার বিষয়টি এখনও ঝুলেই আছে।

ভোলার আবুল বাশার ঢাকায় অটোরিকশা চালান প্রায় বিশ বছর ধরে। সরকারের ঘোষণার পর ২০০৮ সালে নিজের লাইসেন্সসহ কাগজপত্র বিআরটিএতে জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এক দশকেও অটোরিকশা বরাদ্দ না পাওয়ায় তিনি হতাশ।

“আইজ এত বছর হইয়া গেল এইটার কোনো সুরাহা পাইলাম না। সেইটা আইজও দিচ্ছে না। সরকার আমাগোরে খালি রান দেখাইতেছে।”

আসলাম শেখ নামের আরেক চালক অভিযোগ করেন, অটোরিকশার বরাদ্দ কেবল বিত্তবানদেরই দেওয়া হয়েছে। অথচ চালকদের নামে দিলে তাদের স্বচ্ছলতা ফিরত; যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রবণতাও কমত।

“আমার কিছু নাই। একটা গাড়ি যদি পাইতাম, অইয়া দিয়া হয়ত বাচ্চাকাচ্চা নিয়া সংসার চালাইতাম। জীবনে স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারতাম। কিন্তু উনারা গাড়িগুলি এমন লোকেরে দিছে, যাগো টাকার অভাব নাই। খোঁজ নিয়া দেখেন, প্রত্যেকটা গাড়ির মালিক টাকাওয়ালা।”

খিলগাঁও এলাকার চালক আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেবল যাত্রীরা নয়, চালকরাও অটোরিকশতার মালিকদের কাছে জিম্মি।

“মালিক তো আমার কাছ থেইকা লজেনচুসের মতো চুইষা নিতেছে। আমিও যাত্রীগো কাছ থেইকা নিতেছি বাধ্য হইয়া। নিজে মালিক হইলে সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স ছাড়া আর কিছু কাউরে দেওন লাগবে না। সরকার ভাড়ার যে রেইট ঠিক কইরা দিছে সেই রেইটে আমি ভাড়া মারব।”

এই চালক হিসাব করে দেখান, সারাদিনে ১৫০ কিলোমিটার অটোরিকশা চালালে কিলোমিটার প্রতি দেড় টাকা হিসেবে ১৮০০ টাকা ভাড়া হয়। সেখান থেকে মালিক নিচ্ছে ৯০০ টাকা। গ্যাস খরচ বাদ দিলে চালকের ৫০০ টাকাও থাকে না।

“ঢাকা শহরে পরিবার নিয়া থাকতে গেলে তো মাসে অন্তত হাজার পনের টাকা লাগে। গাড়ি চালায়ে এই টাকাটা পাই না বলে আমারে এই দুর্নীতিটা,মানুষের সাথে ছলচাতুরি করতে হয়। মিটার নষ্ট, মিটারে যামু না-এইসব বলতে হয়। মানে, যার লগে যেইভাবে পারি আমার ১৫ হাজার টাকা আদায় করমু।”

বাংলাদেশ অটোরিকশা,অটোট্যাম্পো পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক অভিযোগ করেন, অটোরিকশা বরাদ্দ নিয়ে মালিকদের মামলার নিষ্পত্তির পর চার বছর হয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় ‘ইচ্ছে করে আটকে রেখেছে’।

“এটা নিয়ে এখন আর কোনো বাধা নেই। আমরা অনেকবার তাগিদ দিয়েছি। বিআরটিএ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে, মন্ত্রণালয় আবার বিআরটিএতে পাঠিয়েছে। এভাবে চিঠি চালাচালির মধ্যে এটা আছে। আমরা বুঝতে পারছি না এটা কবে বাস্তবায়ন হবে।”

চালকদের নামে পাঁচ হাজার অটোরিকশা বরাদ্দের আর কত দেরি জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান গত সপ্তাহে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,তাদের হাতে আর কোনো কাজ বাকি নেই। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও তারা পাননি।

“মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে বিআরটিএ দিতে পারে। আর সিদ্ধান্ত না দিলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমি যতদূর জানি, এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।”

আর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএএন সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নীতিমালায় ঢাকায় ১৩ হাজার অটোরিকশার কথা বলা হয়েছে। ওই পরিমাণ গাড়ির নিবন্ধন এর মধ্যেই দেওয়া আছে।

“আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী যেটা আছে সেটা আমরাতো বাড়াতে পারি না। আইনি বাধা আছে। এর বাইরে আমার আর কিছু বলার সুযোগ নাই।”

অটোরিকশা বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে বিআরটিএর প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রস্তাব সব সময়ই আসছে, কিন্তু আইন পরিবর্তন না করে, নীতিমালা পরিবর্তন না করে কোনো কিছু করা যাবে না।”