মঙ্গলবার ভোরে মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বান জানালেন ভক্তরা।
সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়নী মুনির কন্যা রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে।
মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবী পক্ষের। এর আগের পক্ষ হল পিতৃপক্ষ। এই পক্ষে ভক্তরা তাদের পূর্বপূরুষের আত্মার প্রীতির জন্য অন্ন-জল নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে একে বলা হয় তর্পণ।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভোর ৬টায় শুরু হয় মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা। ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারীর চণ্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ইয়াচণ্ডী অর্চনা ছিল শুরুতে। তারপর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
দ্বিতীয় পর্বটি শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। এ পর্বে ছিল মহালয়ার মূল আচার-অনুষ্ঠান। ঘট স্থাপনের পর নানা স্তব-স্তুতিতে দেবীকে মর্তে আহ্বান জানানো হয়।
পরে ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিতৃপক্ষের শেষে আজ দেবীপক্ষের সূচনা হল। দেবী দুর্গা যখন অসুর বধ করলেন, তখন দেবতারা স্তুতি-স্তবে তাকে তুষ্ট করে বর পেয়েছিলেন। দেবী তখন বর দেন, দেব-দেবী আর মর্ত্যের যেকোনো প্রাণী বিপদে পড়ে তার স্মর করবে, তাকে তিনি বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
“মহালয়ার এ দিনে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান করে আমরা তার শরণাগত হই, শক্তির আরাধনায় আমরা সব বিপদ কাটিয়ে উঠে সত্য ও সুন্দরের পূজা করি।”
তিথি অনুযায়ী, ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে মূল পূজা। ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ধারাবাহিকতায় কদিন আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পূজায় তারা জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছেন।
পরে দুর্গোৎসবের আইনশৃঙ্খলা প্রস্তুতি নিয়ে এক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবারের দুর্গাপূজায় রাত ৮টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের সময় বেঁধে দেন। একইসঙ্গে মণ্ডপ ঘিরে বা সড়কে মেলা বসানো নিষিদ্ধ করেন।
এ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশজুড়ে পূজা মণ্ডপগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এক লাখ ৬৮ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ বিষয়ে জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,
“পূজায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসনে একাধিক বৈঠক করেছি। তারা সবাই আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন যে, পূজায় কঠোর নিরাপত্তা তারা দেবেন।
“এছাড়া প্রতি বছরই তো কত শঙ্কা থাকে। আমরা সব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে প্রতি বছর ধুমধাম করে পূজা উদযাপন করব।”
আগামী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা দুর্গাপূজার সার্বিক পরিস্থিতি, শারদোৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান তিনি।