হাসিনা-ট্রাম্প আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

নিউ ইয়র্কে এক সভার ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে কথা হয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গও এসেছে।

রিয়াজুল বাশার নিউ ইয়র্ক থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2017, 03:14 AM
Updated : 19 Sept 2017, 06:21 PM

সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সঙ্কটে ‘বাংলাদেশের পাশে থাকার’ আশ্বাস দিয়েছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের সভার ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে শহীদুল হক জানান।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। ট্রাম্পের আয়োজনেই সকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘হাই লেভেল মিটিং অন ইউএন রিফর্ম’ শীর্ষক ওই সভা হয়।

এবার এমন এক সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন বসছে, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন।

কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশের এই দফায় আরও প্রায় চার লাখ শরণার্থী প্রবেশ করেছে। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

হাসিনা-ট্রাম্প আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘মিয়ানমার ইস্যুতে আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। অ্যান্ড উই উইল সি হাউ ইট ক্যান বি রিজলভড’।” 

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন চলছে তাও ট্রাম্প জানতে চান। এ সময় শেখ হাসিনা ‘ভাল করছে’ বললে ট্রাম্প সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক ফেইসবুক পেস্টে এই সাক্ষাতের একটি ভিডিও ক্লিপ তুলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, “আমরা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু এবং উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ দেওয়ার বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনার প্রত্যাশায় আছি।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ভারতের সঙ্গে আলোচনাতেও রোহিঙ্গা ইস্যু এসেছে। সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ইন্ডিয়া অবশ্যই বাংলাদেশের সঙ্গে আছে সবসময় এবং এই সমস্যা সমাধানে হেল্প করবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

রোববার আবুধাবি থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একই ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কে পৌঁছান শেখ হাসিনা ও সুষমা স্বরাজ। বিমানেও তাদের মধ্যে ‘ছোটখাট মিটিং হয়েছে’ বলে জানান শহীদুল হক।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে শেখ হাসিনা তার বক্তব্য তুলে ধরবেন; সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের এই মানবিক সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মিয়ানমার তাদের অবস্থানে অনড়। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবার জাতিসংঘ অধিবেশনেও থাকছেন না।

২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর ওইদিনই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

আর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “মিয়ারমার থেকে যারা এসেছে, তাদের বিষয়ে বাংলাদেশকে তারা (ইউএনএইচসিআর) সাহায্য করতে চায় এবং বাংলাদেশ সফর করতে চায়।”

এদিকে সোমবারই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়।

চীনা, রাশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ওই বৈঠকে অংশ নেন বলে শহীদুল হক জানান।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সেখানে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ যে এদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সে বিষয়ে তারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একইসাথে মিয়ানমারকে বলেছেন নির্মমতা দ্রুত বন্ধ করতে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর যারা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাখাইনের প্রকৃত তথ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তুলে ধরা হচ্ছে না- এমন কথা বৈঠকে বলার চেষ্টা করেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

“তখন সবাই বলেছেন, আসলে বাস্তবতা কি সেটা আমরা সবাই জানি। আমরা ওইটা নিয়ে আলোচনা না করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সেইটা ফোকাস করব,” বলেন পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, “বৈঠকে তারা বলেছেন, দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। অ্যাট্রোসিটিজ বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারের যারা পালিয়ে এসেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির দাবি।”

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

এদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশ যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে, সেটা থেকে ভুটানকে সেবা দিতে পারে কি না সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া নতুন যে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল শুরু হল সেখান থেকে ভুটান ব্যান্ডউইথ নিতে চায়।”

সোমবার আরও দুটি উচ্চ পর্যায়ের সেশনে শেখ হাসিনা অংশ নেন। সেগুলো হল ‘হাই লেভেল মিটিং অন দ্য প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অ্যান্ড অ্যাবিউজ’ এবং ‘হাই লেভেল ফলোআপ মিটিং অব গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’।