ওএমএসে আতপ চাল দেখে মুখ ঘোরাচ্ছেন ক্রেতারা

খাদ্য অধিদপ্তর স্বল্প দামে খোলা বাজারে বিক্রি শুরু করলেও আতপ চাল দেখে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2017, 12:08 PM
Updated : 18 Sept 2017, 03:07 PM

এই অবস্থা দেখে ডিলাররাও আগ্রহ হারিয়েছেন। প্রথম দিনে ঢাকায় ১০৯ জন ডিলার চাল-আটা সংগ্রহ করলেও সোমবার এই সংখ্যা ৯৪ জনে নেমে আসে।

সারাদেশে ৬২৭টি ট্রাকে করে এমএসের চাল বিক্রি শুরু হয় রোববার। ঢাকা মহানগরীতে ১২০টি ট্রাকে তা বিক্রি হচ্ছে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান।

ঢাকায় চালের সঙ্গে আটাও বিক্রি হচ্ছে। তবে চালের দাম দ্বিগুণ করে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার কয়েকটি ট্রাকের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, চালের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না, তবে আটা বিক্রি হচ্ছে।

একজন ক্রেতা বলেন, আগে সিদ্ধ চাল যে দামে বিক্রি হত, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে আতপ চাল কিনতে কেউই আগ্রহী হবে না।

বিক্রি শুরুর প্রথম দিন রোববার এই রকম ক্রেতাশূন্য দেখা যায় ওএমএসের ট্রাক

তবে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, আতপের মতো হলেও মানের দিক থেকে এটা সিদ্ধ চালের মতোই। মানুষ ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্থ হয়ে যাবে।

বাজারে চালের দাম প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায় পৌঁছায় শহরগুলোর সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য খোলাবাজারে চাল বিক্রির এই উদ্যোগ সরকারের।

সোমবার দুপুরে আগারগাঁও বিএনপি বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওএমএসের ট্রাকে অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতা। বস্তির বাসিন্দা, রিকশা চালক ও নিম্ন আয়ের মানুষ ট্রাকের কাছে এসে চাল দেখে আবার চলে যাচ্ছেন।

‘ট্রাক সেলের’ কর্মী সাদ্দাম সাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার গুদাম থেকে আতপ চাল দেওয়ায় লোকজন কিনতে চাচ্ছে না। তারা বলছে, এই চাল ভাত খাওয়ার জন্য নয়, পিঠা তৈরির জন্য।”

দুপুর ২টা পর্যন্ত বিএনপি বস্তি এলাকায় ২০ বস্তা চালের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল মাত্র তিন বস্তা। অথচ আটা বিক্রি হয় ৫ বস্তা।

আটা কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে ‘চাল কিনলে আটা দেওয়া হবে’ এমন শর্ত দিতে দেখা যায় সাদ্দামকে।

ওএমএসের ট্রাকে চাল থাকলেও ক্রেতা নেই; সোমবারের চিত্র

প্রায় একই পরিস্থিতি দেখা যায় শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে ও ফার্মগেইট গ্রিন সুপার মার্কেটর সামনে বসা ওএমএসের ট্রাক সেলে। সকাল থেকে ট্রাক নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতাদের তেমন সাড়া ছিল না।

শ্যামলীতে একজন ক্রেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার কেন যে আতপ চাল দিতে গেল, তা বোধগম্য নয়। ঢাকায় কোথাও আতপ চাল সিদ্ধ করে ভাত খেতে শুনিনি।

“আগে সিদ্ধ চাল যেখানে ১৫ টাকা দিয়েছে সেখানে হঠাৎ করে দেওয়া হলে আতপ চাল, দামও করা হল দ্বিগুণ। এনিয়ে ক্রেতাদের আসলে তেমন উপকার হবে না। বেচা-বিক্রিই তার প্রমাণ।”

নিজের নাম পরিচয় জানাতে চাননি ৫ কেজি আটা কিনতে আসা এই ক্রেতা।

সংগ্রহে কেবল আতপ

বন্যায় ফসলহানির কারণে দেশের বাজার থেকে এবার পরিকল্পনা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। চালের বাজারে অস্থিরতার সঙ্কেত পেয়ে সরকার সম্প্রতি বিদেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কেবল আতপ চালই আমদানি করা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীতে ১২০টি ট্রাকে চলছে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি

ঢাকা জেলার এরিয়া রেশনিং কর্মকর্তা তৌফিক ই এলাহী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মজুদ পরিস্থিতিতে আতপ চালই বেশি।

“মিল মালিকদের কাছ থেকে যেই দুই লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা গেছে, তা চলে যাচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ অন্যান্য সরকারি রেশনিংয়ে। তারা আতপ চাল নিতে চাচ্ছে না। তাই খোলা বাজারে আতপ চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।”

এই আতপ চাল রান্না করলে সিদ্ধ চালের মতোই হবে বলে জানান তৌফিক।

“আমি নিজে এই চাল রান্না করেছি। দেশের ট্রাডিশনাল আতপ চালের মতো এগুলো নয়। এটা সিদ্ধ চালের কাছাকাছি মানের।”

কেউ একবার কিনে নিলে তার ‘ভুল’ ভেঙে যাবে বলে মনে করেন খাদ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা। তার ধারণা, মানুষ কিছু দিনের মধ্যে এই চালে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।