রোহিঙ্গা শিশুদের ক্ষতিপূরণ বিশ্ব কীভাবে দেবে, প্রশ্ন চুমকির

সহিংসতা ও নিপীড়নের মুখে সন্ত্রস্ত হয়ে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের যে মানসিক ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2017, 02:35 PM
Updated : 14 Sept 2017, 02:58 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে ‘শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও প্রতিকূলতা: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।

মেহের আফরোজ বলেন, “বর্তমান বিশ্বের বড় একটি সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের শিশুদের মানবিক জীবন। এই শিশুদের যে মানসিক ক্ষতি হয়ে গেল, তার ক্ষতিপূরণ বিশ্ব দেবে কী করে?

“তাদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার বিষয়টি হয়তো একটু সময়সাপেক্ষে হবে। আমরা চাই না যে, বিশ্বের একটি শিশুরও এ ধরণের ক্ষতি হোক। কিন্তু এ শিশুদের যে মানসিক ক্ষতি হয়ে গেল, তা পূরণ করা কিন্তু আসলেই কঠিন।”

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।

দমন অভিযানের মুখে পরদিন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল। এরইমধ্যে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ধারণা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শিশু বলে জাতিসংঘের হিসাব।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা।

রোহিঙ্গাদের প্রতি এই সহিংসতা বন্ধের জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানালেও দেশটির নেত্রী অং সান সু চি বলছেন, রাখাইনে সবাইকে রক্ষার জন্য কাজ করছেন তারা।

রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে চুমকি বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যারা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখন ওরা ৫ লক্ষের কাছাকাছি চলে আসছে। এদের স্পেশাল আইডি করতে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে আমরা কোনো সমস্যার মধ্যে না পড়ি। ভবিষ্যতে তাদের যেন তাদের ভূ-খণ্ড ফিরিয়ে দেওয়া যায়, এই বিষয়টি সারা বিশ্বকে জানিয়ে আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি।”

পরিবারে কন্যা শিশুরা যত্নের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আর মেয়ে হলে একধরণের যত্ন, ছেলে হলে আরেক ধরণের- সেটা নিরসনে আমরা কাজ করছি। শিশুর যত্নে মায়েদের সচেতন করতে পারলে আমাদের কাজটা অনেক সহজ হবে। সেটা আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে করতে পারি।”

মাদকাসক্ত শিশুদের পুনর্বাসনের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এদের নতুন জীবনে আনা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সে কাজটি করে যাচ্ছি। নতুন একটি প্রজেক্ট তৈরি করছি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শিশুদের উঠিয়ে এনে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য আমরা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) উদ্যোগে ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় ডিআরইউএর গোলটেবিল মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা হয়।

ইউনিসেফের এডুকেশন ম্যানেজার মো. মহসিন জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ২ লাখই শিশু, যাদের ১ লাখই ৮ বছরের কম বয়সী।

“এটি শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশের সময়। কিন্তু আমরা তাদের জন্য কী করবো? মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময়ই তারা এক ধরনের দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, খাদ্য, পুষ্টি ও বাসস্থানের পাশাপাশি তাদের জন্য একটি খেলনাও প্রয়োজন। তাদের এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে ইউনিসেফ খেলাধুলার ব্যবস্থা করছে। যার মাধ্যমে খেলনা, ছড়া, কবিতার মাধ্যমে শিশুদের আনন্দ দিয়ে রাখা যাবে।

শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশের ক্ষেত্রে তারা কি ধরণের প্রতিকূলতা বা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা প্রচারের মাধ্যমে গণমাধ্যম ‘ওয়াচডগের’ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডিআরইউর সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক কোষাধ্যক্ষ খাইরুজ্জামান কামাল, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম সাবু, সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদা চৌধুরী ও ডেইলি অবজারভারের বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ বেগম বক্তব্য দেন।