এমসিকিউ উঠিয়ে দিতে শিক্ষাসচিবের মত

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে নিজের মত দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2017, 07:58 AM
Updated : 12 Sept 2017, 09:24 AM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের ছয়টি বইয়ের পরিমার্জিত সংস্করণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সচিব বলেন, “এমসিকিউটা বোধহয় পরিপূর্ণভাবে উঠিয়ে দেওয়া উচিত, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমরা নিশ্চয়ই আগামীতে আপনাদের (শিক্ষাবিদ) সাথে বসব।”

এবার থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশ থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে তা সৃজনশীল অংশে যোগ করা হয়েছে। ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর পর প্রথমেই নেওয়া হচ্ছে এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা।

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিভিন্ন মহল সমালোচনা করলেও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো সেসবের জবাব দিতে না পারার খেদ ঝড়েছে সচিব সোহরাবের কণ্ঠেও।

এমসিকিউয়ের নমুনা উত্তরপত্র (ফাইল ছবি)

“আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে সমালোচনা হয়, আমরা জবাব দিতে পারি না। যেমন ধরুন- আমাদের প্রশ্নপত্র নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়, কেউ কেউ এমনও লিখেছেন মন্ত্রী, সচিব, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন আউট করে দিচ্ছেন।”

বোর্ডের চেয়ারম্যানেরও প্রশ্নপত্র দেখার সুযোগ থাকে না জানিয়ে সোহরাব হোসাইনের ভাষ্য, শিক্ষকরাই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এ দাবির পেছনে নিজের ব্যাখ্যাও অনুষ্ঠানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন তিনি।

পরীক্ষার হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না- সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, এতেও শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নিতে হবে।

এমসিকিউ প্রশ্ন তুলে দেওয়ার ব্যাখ্যায় সোহরাব বলেন, “বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষককে যে কোনো উপায়ে কনভিন্স করে ওই কক্ষের সমস্ত ছাত্রছাত্রী যেন ত্রিশ মার্কস পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। একজনকে বলে দিচ্ছেন তিনি আবার পাস করে দিচ্ছেন। এটা অর্থের বিনিময়ে হচ্ছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট আসছে।

“আরেকটা ধ্বংস হচ্ছে যে ভুল আনসার দিচ্ছেন। অনেকগুলো ঘটনা এমন ঘটেছে, সবগুলো সাবজেক্টে যে আশির উপরে পেয়েছে, কিন্তু একটা সাবজেক্টে গিয়ে দেখা গেছে- মূল প্রশ্নে ঠিকমত পেয়েছে, কিন্তু এমসিকিউতে গিয়ে সাত পেয়েছে, আট পেয়েছে। সেখানে ১০ পাওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।”

রাজধানীর রাজউক কলেজে লিখিত ও এমসিকিউয়ের নম্বরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে সচিব বলেন, “সেখানকার ১০ জন ছাত্র ফেল করেছে, কারণ তারা এমসিকিউতে ৭-৮ পেয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক তাদের খাতা নিয়ে গেছে। নিশ্চিয় কোনো কারণ ছিল নইলে খাতা নিয়ে গেল কেন?

“এরপরেও ঢাকা বোর্ডকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি যে, তারা কী ৩০ নম্বরের উত্তর দিয়ে ৮ পেয়েছে, নাকি ১০ নম্বরের উত্তর দিয়ে ৮ পেয়েছে। ধারণা করতে পারব খাতা নেওয়াটাই কারণ কি না? নাকি আসলেই কম পেয়েছে। তারা কম পাওয়ার মত ছাত্র না।”

মন্ত্রিসভায় উঠছে শিক্ষা আইন

শিক্ষা আইনের খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভায় তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সচিব সোহরাব হোসাইন।

তিনি বলেন, “প্রায় ছয় বছর ধরে শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। যে আইনের অভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি না, সেটি বোধহয় এ সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় তোলার জন্য মোটামুটি রেডি হয়ে গেছে। খুব কঠিন কঠিন কিছু বিষয় আছে সেখানে, আপনাদের সাহায্য লাগবে, আপনাদের লেখালেখিতেও সাহায্য লাগবে।

“বেশ কঠিন কিছু বিষয় আছে, যেটা অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য আমরা সকল মহলের মতামত, সকলের সমর্থন, সবকিছু নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেগুলো মন্ত্রিসভারও বিভিন্ন সদস্য অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখবেন, কারণ বিষয়টি সবাইকে স্পর্শ করবে।”

শিক্ষার্থীদের মেধাবী আখ্যায়িত করে সোহরাব বলেন, “অনেক সময় প্রশ্ন আসে… তারা তো ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে। ভর্তি পরীক্ষা পাস-ফেলের বিষয় নয়। নির্ধারিত সিটের বিপরীতে যারা ভালো করবেন তারা ভর্তি হবেন।”

নির্ধারিত সিলেবাসের বাইরে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হলে শিক্ষার্থীরা তার উত্তর দিতে পারে না বলেও জানান তিনি।