রাখাইন থেকে টেকনাফ: ধ্বংস মৃত্যু ঠেলে দেশান্তরের গল্প

প্রথমে এল সেনাবাহিনী;  গ্রামের ভেতরে নির্বিচারে চলল গুলি। এরপর আরও সৈন্য এল, সঙ্গে বেসামরিক লোকজন। ঘরে ঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন দিয়ে গেল তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2017, 08:48 PM
Updated : 8 Sept 2017, 08:58 PM

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিবরণ থেকে খা মাউং সেইক গ্রামে গত ২৫ অগাস্টের সেনা অভিযানের এমন চিত্রই তুলে এনেছে রয়টার্স।   

ওই গ্রাম থেকে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ২০ জন মুসলমান ও হিন্দুর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রয়টার্স শুক্রবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

খালিদ হোসেন নামের ৫৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা বলেছেন, সেনাবহিনী তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার সময় রাখাইনের বৌদ্ধ মগদের দেখা গেছে তাদের সঙ্গে।      

তিনি জানান, গ্রামের বহু মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গ্রামের দশ হাজারের মত মুসলমানের মধ্যে যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাদের প্রায় সবাই চলে এসেছেন বাংলাদেশে।  

কক্সবাজারে আসার পর খালিদের জায়গা হয়েছে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে; সেখানে আগে থেকেই বসবাস করে আসছেন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা।    

গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। তার পর থেকে দুই সপ্তাহে অন্তত ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে বলে জাতিসংঘের তথ্য।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যে বিবরণ দিয়েছেন, তার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। গতবছর অক্টোবরে পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ৯ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই সেখানে সাংবাদিকদের যাতায়াতে কড়াকড়ি চলছে।

মিয়ানমার তাদের সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে বর্ণনা করেছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে হামলা ও হত্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদেরই।

রাখাইনের ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দিতে রাজি নয় দেশটির সরকার। স্থানীয় বৌদ্ধদের বিবেচনায় তারা ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া’ অবৈধ বসতিস্থাপনকারী।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিযোগ, তাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্যেই সেনাবাহিনী ও মগদের এই দমন অভিযান।

বদি আলম নামের ২৮ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা রয়টার্সকে বলেছেন, খা মাউং সেইক গ্রামে যখন সেনাবাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছিল, কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে তিনি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন।

কয়েক ঘণ্টা পর স্বজনদের খোঁজে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে তিনি দেখেন ধানক্ষেতে ছড়ানো লাশ আর লাশ। তার মা আর ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশও তার মধ্যে ছিল। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মা-ভাইকে কবর না দিয়েই তাকে সীমান্তের পথে পা বাড়াতে হয়েছে। 

রয়টার্স জানিয়েছে, মুসলিমপ্রধান খা মাউং সেইক গ্রামে ছয় হাজারের মত বৌদ্ধ ও হিন্দুর বসবাস ছিল। ওই গ্রামের ফইরা বাজারের হাজারখানেক দোকান ছিল স্থানীয়দের ব্যবসার কেন্দ্র।

২০০২ সালের অক্টোবরে এক দফা দাঙ্গা, রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে সরকারের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির উদ্যোগ এবং হিন্দুদের নাগরিক করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে ওই এলাকায় জাতিগত বিভেদ প্রকট হয়ে ওঠে।

গত অক্টোবরে পুলিশের ওপর এক দফা হামলার পর রাখাইনের গ্রামগুলোতে সেনা ও পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলে গণগ্রেপ্তার। 

আবু কালাম নামের এক রোহিঙ্গা তার শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ দেখিয়ে রয়টার্সকে বলেন, বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে- এমন সন্দেহে তাকে ছয় দিন সেনা ব্যারাকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। 

খা মাউং সেইক গ্রাম থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, ২৪ অগাস্ট রাত ২টার পর তারা গুলির শব্দ পান। ওই গ্রামের কাছেই একটি পুলিশ পোস্টে সেই রাতে হামলা করেছিল বিদ্রোহীরা। 

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ভাষ্য, বিদ্রোহীরা পুলিশ ক্যাম্পে গ্রেনেড হামলা চালায়। পরে মনোযোগ ঘুরিয়ে দিতে তারা হামলা চালায় হিন্দুদের গ্রামে। 

রাতের হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ভোরের দিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে কীভাবে গ্রামে ঢুকেছিল, সেই বর্ণনা রয়টার্সকে দিয়েছেন চার রোহিঙ্গা গ্রামবাসী।

আবুল হোসেন নামের ২৮ বছর বয়সী একজন বলেছেন, একটি দলের সঙ্গে দৌড়ে পালিয়ে তিনি আশ্রয় খুঁজছিলেন। এর মধ্যেই পেছনে তাকিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেককে পড়ে যেতে দেখেন। 

পরে জঙ্গলে লুকানো রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও মর্টার ছোড়া হয় বলেও ওই চারজন জানিয়েছেন।

বদি আলম ও অপর দুই গ্রামবাসী জানান, সেনাবাহিনী এবং তাদের সঙ্গে আসা মগদের দলটি গ্রামে লুটপাট চালায়।

টাকা-পয়সা, কাপড় আর গরু- দামি যা যা পাওয়া যায় নিয়ে তারা বাড়িতে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। নিহতদের লাশগুলো টেনে এক জায়গায় করার কাজেও ওই বেসামরিক দলটি সৈন্যদের সহযোগিতা করে বলে তাদের ভাষ্য। 

রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর এই দমন অভিযানের মধ্যে পড়ে রাখাইনের হিন্দুদেরও প্রাণ দিতে হয়েছে। ওই গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুদের একটি দল আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্পে।    

আনিকা বালা নামের এক হিন্দু তরুণী রয়টার্সকে বলেছেন, গ্রামের মুসলমানদের ওপর হামলায় অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় তার স্বামীকে হত্যা করে বৌদ্ধ মগরা।

ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা আনিকা পরে মুসলমান রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা নিয়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে।

৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ জুবায়ের ছিলেন খা মাউং সেইক গ্রামের চেয়ারম্যানের সহকারী। তিনি বলেন, চোখের সামনে ঘরবাড়ি পুড়তে দেখে মুরুব্বিরা সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামে থাকা আর নিরাপদ হবে না। 

“আমরা ভেবেছিলাম আবার আমরা গ্রামে ফিরে যেতে পারব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তা আর সম্ভব না।”

বদি আলম জানান, তাদের গ্রামের শ’ খানেক রোহিঙ্গা লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মিয়ানমারেই থেকে গেছেন।

“ওদের একজন আমাকে বলেছে, মরতে হলে ওইখানেই মরবে, পালাবে না।”

নাফ নদীর এপর-ওপার

রাখাইনে পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে পায়ে হেঁটে যারা বাংলাদেশ সীমান্তে আসতে পারছেন, মংডুতে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে নৌকার জন্য।

মাছ ধরার কোনো নৌকার সহযোগিতা নিয়ে প্রথমে তারা পার হচ্ছেন নাফ নদী। তারপর কেউবা পাহাড়-খাল পাড়ি দিয়ে কেউবা নৌকায় করে সাগরপথে টেকনাফে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।     

দুর্গম এই পথে অনেকেরই আর নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানো হচ্ছে না। নৌকাডুবির ফলে প্রতিদিনই নাফ নদী দিয়ে ভেসে আসছে রোহিঙ্গাদের লাশ। কারও কারও গায়ে গুলির চিহ্নও থাকছে।

বিবিসির প্রতিবেদক সঞ্জয় মজুমদার সরেজমিনে ঘুরে এক প্রতিবেদনে জানান, বার বার নৌকাডুবির ঘটনায় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ নাফ নদী দিয়ে সরাসরি অনুপ্রবেশে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। ফলে অনেকেই ঘুরপথে নদী হয়ে যাচ্ছেন সাগরে। সেখান থেকে তীরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।  

শামলাপুর সৈকতে এমনই এক নৌকায় করে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পৌঁছানোর দৃশ্য দেখেছেন সঞ্জয়। বাংলাদেশিরা কেমন করে সৈকতে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গাদের নৌকাগুলোকে পথ দেখিয়ে আসতে সহায়তা করছেন- সেই বিবরণ দিয়েছেন তিনি।

“সৈকতে নামার পর তাদের সবাই একেবারে ভেঙে পড়ল। ভয়ঙ্কর ওই যাত্রার পর তাদের বিভ্রান্ত, বিমূঢ় দেখাচ্ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তারা পানি শূন্যতায় ভুগছে। কেউ কেউ বমিও করছিল।”

রোহিঙ্গাদের ওই দলটির কয়েকজনকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেন সঞ্জয়। তারা যে বেঁচে আছে, সেটাই যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। স্থানীয়দের কেউ কেউ তাদের দিকে মোবাইল ফোন এগিয়ে দিচ্ছিলেন, যাতে তারা পরিবারকে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা জানাতে পারেন। 

ওই সৈকতে রহিমা খাতুন নামের এক মধ্যবয়সী নারীর সঙ্গে দেখা হয় সঞ্জয়ের। মংডু থেকে আসা রহিমা চারদিকে তাকিয়ে তার ভাই নবী হাসানের খোঁজ করছিলেন।

দশ দিন আগে গ্রামে সেনা অভিযানের সময় পালিয়ে আসার পথে তারা আলাদা হয়ে যান। বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর প্রতিদিনই সৈকতে এসে বিভিন্ন নৌকায় আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিজের ভাইয়ের খোঁজ করার কথা জানান  রহিমা। 

সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে সঞ্জয়ের সামনেই। সেদিন আসা চতুর্থ নৌকাটি সৈকতে ভেড়ার পর রহিমা চিৎকার করতে করতে ছুটে যান। নৌকা থেকে নামা এক তরুণও এগিয়ে আসেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন দুই ভাইবোন।  

সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে নবী হাসান সঞ্জয়কে বলেন, তাদের গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় মগরাও ছিল। তারা দুজন ছাড়া পরিবারের আর সবাইকেই মরতে হয়েছে সেনা আর মগদের হাতে। 

প্রায় একই ধরনের বর্ণনা সঞ্জয় শুনেছেন ষাটোর্ধ্ব দিল বাহার ও তার স্বামী জাকির মামুনের কাছ থেকে। তাদের সঙ্গে ছিল তাদের কিশোর বয়সী নাতি মাহবুব; তার হাতে পিঠে গুলির ক্ষত।   

জাকির বিবিসিকে জানান, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বুথিডং এলাকায় তাদের বাড়ি। সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে এসে লাউড স্পিকারে সবাইকে যার যার ঘরের ভেতরে থাকতে বলে। পরে ঘরে ঘরে বোমা ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে যারা বাড়ি ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছে, তাদের দিকে চালানো হয় গুলি। নাতিকে নিয়ে জাকির ও দিল বাহার কোনো রকমে পালাতে পারলেও মাহবুবের বাবা গুলিতে নিহত হন। সারারাত ধরে তারা গুলির শব্দ শুনতে পান; সকালে দেখেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তাদের গ্রাম।

ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে কিছু চাল আর নষ্ট না হওয়া থালাবাসন সংগ্রহ করে অন্যদের সঙ্গে সীমান্তের পথ ধরেন তারা তিনজন।

জাকির বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশের পথে আসতে ১২ দিন ধরে পাহাড় আর জঙ্গলের পথে হাঁটতে হয়েছে তাদের। সঙ্গে আনা চাল শেষ হয়ে গেছে অষ্টম দিনেই। এরপর লতাপাতা আর বৃষ্টির পানি খেয়ে তাদের প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদক সঞ্জয় লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের ওই গ্রুপটির ঠাঁই হয়েছে বালুখালির একটি নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে। মাহবুবকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

‘এখনও জ্বলছে’ রোহিঙ্গা গ্রাম

সংঘাতময় রাখাইনে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ আপাতত না থাকলেও মিয়ানমার সরকারের ব্যবস্থাপনায় কয়েক দিন আগে সাংবাদিকদের একটি দল ওই এলাকা ঘুরে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিবেদক জোনাথন হেড।

সাংবাদিকদের জন্য মিয়ানমার সরকারের শর্ত ছিল, সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং যেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, কেবল সেখানেই তারা দেখার সুযোগ পাবেন।   

জোনাথন হেডের রাখাইন দেখে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। তিনি লিখেছেন, ওই নিয়ন্ত্রিত সফরের মধ্যেও রোহিঙ্গা মুসলমানদের একটি গ্রামে তিনি ঘরবাড়ি পুড়তে দেখেছেন।

মংডু জেলায় আল লে থান কিয় শহর ঘুরে ফেরার পথে ওই গ্রাম দেখেন হেড। ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে তার মনে হয়েছে, খুব বেশি সময় আগে ওই আগুন লাগানো হয়নি। 

স্থানীয় পুলিশ ওই সাংবাদিকদের দলটিকে বলেছে, গ্রামের মুসলমানরা নিজেরাই নিজেদের গ্রামে আগুন দিয়েছে। তবে ওই সময়ও দূর দিগন্তে অন্তত তিনটি জায়গা থেকে ধোঁয়া উড়তে এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ পাওয়ার কথা লিখেছেন বিবিসির এই প্রতিবেদক।  

ধানখেতের মধ্যে এক গ্রামে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে তারা এগিয়ে যান। সেখানে পৌঁছে গ্রামের প্রথম বাড়িটি জ্বলতে দেখেন। ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে সব ছাই হয়ে যায়।

জোনাথন হেড লিখেছেন, ওই গ্রামে যে তখুনি আগুন লাগানো হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 

সাংবাদিকদের দলটি ওই গ্রামে ঢোকার পথে একদল তরুণের দেখা পান; তাদের হাতে ছিল তলোয়ার, চাপাতি আর গুলতি। সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলেও তারা ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি হয়নি। 

তবে ওই দলে থাকা মিয়ানমারের কয়েকজন সাংবাদিক স্থানীয় ওই তরুণদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। ওই তরুণরা নিজেদের বৌদ্ধ বলে পরিচয় দেন। তাদের একজন আগুন দেওয়ার কথা এবং এ কাজে পুলিশের সহযোগিতা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন বলে জানানো হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

আরও কিছুটা যাওয়ার পর একটি মাদ্রাসা দেখতে পায় সাংবাদিকদের দলটি। মাদ্রাসার ছাদ তখনও জ্বলছিল। তাদের চোখের সামনেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি বাড়িতে।

জোনাথন হেড লিখেছেন, “ওই গ্রামে আর কাউকে আমরা দেখিনি। আমরা যাদের দেখেছি তারা ছিল হামলাকারী। গ্রামের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল গৃহস্থালির জিনিসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা, মেয়েদের পোশাক। এক জায়গায় পড়ে ছিল একটা খালি জগ, ভেতর থেকে পেট্রোল চুইয়ে পড়ছিল। রাস্তার মাঝখানে আরও একটা জগ পড়েছিল, তার ভেতরেও খানিকটা পেট্রোল ছিল।

“আমরা যখন হেঁটে গ্রাম থেকে বেরিয়ে গেলাম, ততক্ষণে পুরো গ্রাম পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”