রীড ফার্মা: অবশেষে বরখাস্ত ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা

রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতা প্রমাণ হওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করার কথা আদালতকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল হক খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2017, 10:09 AM
Updated : 24 August 2017, 10:17 AM

ব্যবস্থা নিতে বিলম্বের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় স্বাস্থ্য সচিবকে এ মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই দিয়েছে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সচিবের দেওয়া ব্যাখ্যা বুধবার গ্রহণ না করে সচিবকে ফের ব্যাখ্যা দিতে বলেছিল আদালত। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মত হাজির হয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দেন সিরাজুল হক। 

আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। আর রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

মনজিল মোরসেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা সচিব সিরাজুল হক আদালতে হাজির হয়ে বলেছেন, ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।”

রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যু হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ওই ঘটনায় ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেন, যাতে রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

ওই মামলার রায়ে গতবছর নভেম্বরে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেন- মিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।

ঢাকার ঔষধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান ওই রায়ে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের ‘অযোগ‌্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব‌্যর্থ হয়েছে।

আদালতের ওই রায় আসার পরও ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাই কোর্টে একটি আবেদন করলে গত ১৬ মার্চ হাই কোর্ট রুল জারি করে।

ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তাকে কেন চাকরি থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানাতে চাওয়া হয় রুলে। স্বাস্থ্য সচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এর জবাব দিতে বলা হয়।

ওই রুলের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই হাই কোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয়, সেখানেও ওই দুই কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

এরপর ওই ‍দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা গত ৩ অগাস্ট জানতে চায় হাই কোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানায়, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে।

কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন একটি আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের মনজিল মোরসেদ। সেই আবেদেনের ভিত্তিতে ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে তলব করা হয়।

সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য সচিব বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জানান, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে আদালত তাকে বৃহস্পতিবার আবারও হাজির হয়ে ‘যথাযথ ব্যাখ্যা’ দিতে নির্দেশ দেয়।

এরপর সিরাজুল হক খান তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত হয়ে ওই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানান।