আগের নোটিস সরিয়ে বৃহস্পতিবার হল কর্তৃপক্ষ এক নতুন নোটিস দিয়েছে, যাতে ছাত্রীদের কক্ষ, বারান্দা, শৌচাগার ও ব্যক্তিগত এলাকা বাদে বাকি সব জায়গায় ‘যথাযথ পোশাক’ পরিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার দেওয়া প্রথম নোটিসে হলের ভেতর ছাত্রীদের ‘সালোয়ারের ওপর গেঞ্জি’ পরাকে ‘অশালীন পোশাক’ আখ্যায়িত করে তা পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
প্রথম নোটিসে বলা হয়, হলের অভ্যন্তরে দিনের বেলা ও রাতের বেলা কখনোই অশালীন পোশাক ( সালোয়ারের ওপর গেঞ্জি) পড়ে ঘোরাফেরা করা অথবা হল অফিসে কোনো কাজের জন্য প্রবেশ করা যাবে না। অন্যথায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে। |
নিষেধাজ্ঞা না মানলে শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ এনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ওই নোটিসে জানায় কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে হলের এক ছাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সালোয়ার ও গেঞ্জি কী করে অশালীন পোশাক হতে পারে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এ সিদ্ধান্ত মুক্ত চিন্তা, জ্ঞান ও প্রগতির পথে বড় বাধা।”
হলের আবাসিক এই ছাত্রী বলেন, “আমি কীভাবে চলাফেরা করব, ঘুমাব তা আমাকে কেউ বেঁধে দিতে পারে না। হলে তো আরও অনেক সমস্যা আছে, সে দিকে তো কর্তৃপক্ষের নজর নেই, সব দুশ্চিন্তা পোশাক নিয়ে।”
শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক গ্রুপ ‘অপরাজেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এ তন্ময় কুমার হিরা নামের এক সদস্য লিখেন, ধর্ষণের দ্বায় শুধুই নারীর, তার পোশাকের - এই বক্তব্যটি আবার দিতে চাইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষ। পোশাকে শালীনতা বজায় রাখার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে চাইলো, শরীরের ওপর কাপড় চাপাও, নারী......হ্যাঁ? জন্মই তোমার আজন্ম পাপ।
এক পোস্টে ছাত্রী হলের অন্যান্য সমস্যা তুলে ধরে ওই নোটিসের সমালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরুন নাহার মেঘলা।
“রুমে নেটওয়ার্ক না থাকায় মেয়েরা বাইরে কথা বলতে আসে। অবলীলায় সেদিক দিয়ে তাদের চলাচলের পথ করা হয়েছে। হল মেয়েদের, থাকবে মেয়েরা, সেখানে ঘোমটা দেবার কারণ তো দেখি না।”
এসব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হল কর্তৃপক্ষ নোটিসে পরিবর্তন আনলেও সালোয়ার ও গেঞ্জিকে ‘অশালীন পোশাক’ আখ্যায়িত করে কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন হল প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা চৌধুরী।
তবে হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক মনিকা চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলে শালীনতা বজায় রাখা আমাদের উদ্দেশ্য। হলের মেয়েরা দৃষ্টিকটূ পোশাক পরুক, তা আমরা চাইতে পারি না।
“অনেক সময় মেয়েরা এত ক্যাজুয়ালি ঘোরাফেরা করে যে খুবই দৃষ্টিকটূ। হলের অফিসে পুরুষ স্টাফ ও অভিভাবকেরা থাকেন, এক্ষেত্রে নারীর নিজের কাছে অসম্মানজনক পোশাক না পরাই শ্রেয়।”