রীড ফার্মা: ফের আদালতে হাজির হতে হবে স্বাস্থ্য সচিবকে

রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা গ্রহণ করেনি হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2017, 11:58 AM
Updated : 23 August 2017, 11:58 AM

সচিব মো. সিরাজুল হক খানকে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে বৃহস্পতিবার আবারও আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাই কোর্টের তলবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বুধবার আদালতে হাজির হওয়ার পর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সচিবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।

রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য সচিবকে তলব করেছিল হাই কোর্ট।

মনজিল মোরসেদ বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা সচিব সিরাজুল হক আদালতে হাজির হয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আদালত গ্রহণ করেনি। ফলে ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়নি সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার আবার তাকে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে।” 

ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন।

তাদের উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, “১৬ মার্চ থেকে বিবাদীরা বসে আছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই ঘটনায় মোট ৭৬ শিশু মারা গেছে। আপনি বহাল তবিয়েতে আছেন। আর বলছেন দেখতেছি!”

ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এ সময় বলেন, “আগে সতর্ক করা, তারপর বরখাস্ত। সতর্ক না করলে জটিলতার ‍সৃষ্টি হত।”

বিচারক বলেন, “আপনারাতো (দুই কর্মকর্তা) জামাই আদরে আছেন।”

আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ সময় বলেন, “দুজনকে বদলি বা সাসপেন্ড কিছুই করেনি।”

তখন বিচারক বলেন, “ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়নি, আমরাতো আগে থেকে সেকথা বলে আসছি।”

এক পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

বিচারক তখন বলেন, “কোর্টকে আর খাটো করার চেষ্টা করবেন না। মার্চ থেকে বলে আসছি।”

সচিবের আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, “ব্যবস্থা নেওয়ার আগে শোকজ, তদন্ত- এসব আছে। আমরা ব্যাখা তৈরি করার জন্য সময় পাইনি। আমাদের সময় দরকার।” 

বিচারক তখন বলেন, “আগামীকাল যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দিবেন। ৭৬ শিশু মারা গেল। আপনার (সচিব) ছেলেমেয়ে এখানে থাকে না। যারা মারা গেছে, এরাতো মরার জন্য জন্মেছে! এটা দুর্ভাগ্যজনক। এদেশ গরীব হতে পারে। এভাবে শিশুরা মারা যাবে এ শিক্ষা তো কাউকে দেওয়া হয়নি।”

রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যু হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ওই ঘটনায় ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেনম যাতে রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

ওই মামলার রয়ে গতবছর নভেম্বরে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেন- মিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।

ঢাকার ঔষধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান ওই রায়ে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের ‘অযোগ‌্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব‌্যর্থ হয়েছে।

আদালতের ওই রায় আসার পরও ঔষধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাই কোর্টে একটি আবেদন করলে গত ১৬ মার্চ হাই কোর্ট রুল জারি করে।

ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তাকে কেন চাকরি থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানাতে চাওয়া হয় রুলে। স্বাস্থ্য সচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এর জবাব দিতে বলা হয়।

ওই রুলের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই হাই কোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয়, সেখানেও ওই দুই কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

এরপর ওই ‍দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা গত ৩ অগাস্ট জানতে চায় হাই কোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানায়, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে।

কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন একটি আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের মনজিল মোরসেদ। সেই আবেদেনের ভিত্তিতেই ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে তলব করা হয়।