অ্যাটর্নি জেনারেলেরও পদত্যাগ করা উচিৎ: তাপস

প্রধান বিচারপতি যখন আদালতের রায়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অপসারণের প্রসঙ্গ আনেন, তখন তার প্রতিবাদ না জানানোয় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমেরও পদত্যাগ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতা ফজলে নূর তাপস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 05:39 PM
Updated : 22 August 2017, 05:42 PM

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বৃহত্তর ফরিদপুর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী কল্যাণ সমিতির এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব।

অনুষ্ঠানে থাকা রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য গণমাধ্যমে ‘ভুলভাবে’ এসেছিল।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। রায় বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচিও চালাচ্ছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা।

এসব প্রতিক্রিয়া দেখে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের সাম্প্রতিক ঘটনাটি তুলে ধরে বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, তারা অনেক ধৈর্য ধরেছেন।

তার ওই বক্তব্যকে সরকার প্রধানের প্রতি ‘চোখ রাঙানি’ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ না করলে তাকে অপসারণে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন তারা।

এই প্রসঙ্গে বলার সময় আলোচনা সভায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে পেয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, “আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলতে চাই আপনার ওই সময় সঙ্গে সঙ্গে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল। আপনি ওই সময় প্রধান বিচারপতিকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলতেন।

“প্রধান বিচারপতি প্রধানমন্ত্রীকে থ্রেট করেন, আর আপনি বসে বসে শোনেন! আপনার পদত্যাগ করা উচিৎ ছিল।”

এর বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতির কথা মিডিয়ায় এসেছে ভুলভাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি)

“সেদিন অধস্তন আদালতের বিচারকদের রুলস ফ্রেমের শুনানি ছিল। আমরা অনেক সময় নিয়েছি। আমি বললাম বাইরের অবস্থা অনেক উত্তপ্ত। লম্বা করে সময় দেন। উত্তপ্ততা কমলে এর একটা সমাধান হবে।

“উনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন, ‘আমরা কি উত্তপ্ত করছি, আপনারাই তো উত্তপ্ত করছেন, পাকিস্তানে রায়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন। আমাকে নানা রকম এজেন্সি থেকে ফোন দেওয়া হচ্ছে। অনেক মিডিয়ায় এসেছে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারব। এটা ঠিক না’।”

বর্তমান পরিস্থিতে ধীরস্থিরভাবে এগোনোর পরামর্শ দিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, নইলে এই সুযোগে বিএনপি ফায়দা লুটবে।

“বিএনপির কাছে আর কোনো অস্ত্র নেই। বিএনপি আমলে সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিচার করা যায়নি। কীভাবে যেন আমাদের মধ্যে তাদের বন্ধু রয়েছে।  

বিএনপির অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, অথচ তারা বড় বড় কথা বলে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল মামলা, গ্যাটকো মামলা কোনোভাবে এগোনো যাচ্ছে না। যখন তাদের মামলা আসে, তারা দলবল বেঁধে যায়। আপনারা আমাদের সাথে থাকেন।”

‘অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র’

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী নেতারা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “বিচারাঙ্গনে যে অবস্থা, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না। বর্তমান প্রধান বিচারপতির ভূমিকা নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। এত দিন চারদিকে ষড়যন্ত্র যেভাবে ছড়িয়ে ছিল, আজ নতুন যোগ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।

“যারা এ রায় লিখে দিয়েছেন, তারা কিন্তু তার বন্ধু নন। প্রধান বিচারপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন। যদি না করেন, তবে তার আর পাঁচ মাস কয়েক দিন বাকি। তারপর তার কী হবে? সেটাই আমি ভাবি। পাঁচ মাস পর টয়লেট টিস্যু পেপারের মতো তাকে ছুড়ে ফেলে দেবে তার এখনকার বন্ধুরা।”

‘ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা আজ সক্রিয়’ দাবি করে তিনি বলেন, “আর পাঁচ মাসে তিনি আর কত অঘটন ঘটাবেন? তবে আমি বলবো, আপনারা (আইনজীবী) অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকবেন। আগামীতে সুষ্ঠু সুন্দর গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আবার এই সরকার ক্ষমতায় আসবে।”

অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করলে তাতে সমর্থন দেন এলজিআরডি মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনও।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ফজলে নূর তাপস (ফাইল ছবি)

সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস বলেন, “আমাদের ধৈর্য আছে বলেই আপনি এখনও পদে অসীন আছেন। আমরা মুসলমানরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বিসমিল্লাহ বলেই দিনের কার্যক্রম শুরু করি। ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে আপনি সেই বিসমিল্লাহ নিয়েও মন্তব্য করেছেন।”

প্রধান বিচারপতির জাতিগত পরিচয়ের দিকে ইঙ্গিত করে তাপস বলেন, “হাতি ঘোড়া গেল তল, কোথা থেকে জানি মনিপুর থেকে এসে বলে কত জল?

“আর মাত্র পাঁচ মাস আছেন, সুন্দরভাবে থাকেন, না হলে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেন।”

মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, “আমাকে যদি উনি বলেন, আমি একজন অপরিপক্ব সংসদ সদস্য। আমার মতো ৮০ বছরের একজন লোককে যদি বলেন অপরিপক্ক, তাহলে আমি বলব তার মাথায় সমস্যা আছে। উনি যতবার রায় বাতিল করবেন, ততবার সংসদে ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হবে।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম  বক্তব্য রাখেন।

প্রধান বিচারপতি জ্ঞানপাপী: আমু

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘জ্ঞানপাপী’ বলেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরামের আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত লোক যখন উল্টা জ্ঞান দেয়, তখনই মনে হয় তারাই জ্ঞানপাপী।”

পাকিস্তানের উদাহরণ টানায় প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, “তিনি পাকিস্তানের উদাহরণ দিচ্ছেন কী হিসেবে? 

“পাকিস্তানের জজ সাহেব, আইয়ুব খান পাঠিয়েছিলেন আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য। কিন্তু জজ সাহেব পালিয়ে গেলেন, এজাহার পুড়িয়ে দেওয়া হল। এ কথা তাকে স্মরণ রাখতে হবে।”