নূর হোসেনের ভাই দুষছেন ‘মিডিয়াকে’

আলোচিত সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত নূর হোসেনের ছোট ভাই নূর উদ্দিন গণমাধ্যমকে দায়ী করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 12:25 PM
Updated : 22 August 2017, 03:18 PM

আপিলের রায় শুনতে মঙ্গলবার হাই কোর্টে উপস্থিত নূর উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাইয়ের বর্তমান পরিণতির জন্য মিডিয়া দায়ী। আসলে মিডিয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে।”

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে একসঙ্গে অপহরণ করা হলে দেশজুড়ে তোলপাড় ওঠে। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।

তখনই আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। তার কয়েকদিন বাদে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম তার জামাতা হত্যাকাণ্ডের জন্য র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

শহীদুলের অভিযোগের পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত র‌্যাবের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খুনের পরপরই ভারতে পালিয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন। সেখানে ধরা পড়ার পর তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

এই বছরের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের আদালতে রায়ের সাত মাসের মধ্যে হাই কোর্টে আপিলের রায় হল। 

নূর হোসেনের ভাই বলেন, “মিডিয়ার চাপে মামলা তাড়াতাড়ি এগিয়েছে। এ কারণে আমরা ঠিকমতো প্রস্তুতিও নিতে পারিনি। নিম্ন আদালতে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার আগেই বিচার কাজ শুরু হয়ে যায়।”

হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন নূর হোসেনের আইনজীবী এস আর এম লুৎফর রহমান।

বিচারিক আদালত ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল; হাই কোর্ট নূর হোসেন এবং র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে।

নূর হোসেন (ফাইল ছবি)

নূর হোসেনের আইনজীবী লুৎফর রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, “এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করব। রায়ের কপি পাওয়ার আগেই আমরা সিএমপি (আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল) করব।”

নজরুলের মতো নূর হোসেনও ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। এলাকায় আধিপত্যের দ্বন্দ্বে নুর হোসেন র‌্যাবকে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে রায়ে উঠে এসেছে।

আইনজীবী লুৎফর বলেন, এই মামলায় আসামিদের পক্ষে ‘আইনের বিধান ও লিগ্যাল সাবমিশন’ উচ্চ আদালত বিবেচনায় আনেনি।

“নিহত নজরুলের স্ত্রী পূর্বশত্রুতার জেরে নুর হোসেনের নামে এই মামলার এফআইআর করেছিল, সেখানে নুর হোসেনসহ ছয়জন ছিল। অভিযোগপত্রে সেই ছয়জন থেকে পাঁচজনকে বাদ দেওয়া হয়, শুধু নুর হোসেনকে রাখা হয়েছে।”

নুর হোসেনের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে অভিযোগপত্রে আসামি না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

লুৎফর বলেন,“সেই পাঁচজনকে কেন বাদ দেওয়া হল, আর শুধু নুর হোসেনকেই কেন রাখা হল তা চার্জশিটে উল্লেখ নেই। এটা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের পিক অ্যান্ড চুজ বিষয়; কাকে রাখবে, কাকে রাখবে না।”

হাই কোর্টে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তৎকালীন র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।

তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (ফাইল ছবি)

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার আসামি হলেন তারেক সাঈদ ও রহম আলী। হাই কোর্টে তারেক সাঈদের মৃত্যুদণ্ড ও রহম আলীর যাজ্জীবন হয়েছে।

“এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। রায় মেনে নিয়েছি, কিন্তু আমাদের লিগ্যাল প্রসেসে উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর মেয়েজামাই তারেক সাঈদ অর্থের বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে রায়ে উঠে এসেছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সেনাবাহিনীর চাকরি হারান তিনি।

তার আইনজীবী ফরিদ বলেন, “এই মামলায় দুটি পার্ট, একটি ষড়যন্ত্র ও আরেকটি হত্যা। কোনো পার্টেই তারেক সাঈদের অংশগ্রহণ নেই। তাকে কোনোভাবেই এতে জড়ানো যায় না। কিন্তু অন্যভাবে ও অন্য লিঙ্কে তাকে জড়ানো হয়েছে।”

আপিল করলে ‘ভালো ফলাফল’ পাবেন বলে আশা করছেন তারেক সাঈদের আইনজীবী ফরিদ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি সাবেক মেজর আরিফের আইনজীবী এস এম শাহজাহানও বলেন, “আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করব। আমরা আশা করি, আপিলে আমরা ন্যায়বিচার পাব।”

নূর হোসেনের সহযোগী ভারতের কারাগারে বন্দি সেলিমের আইনজীবী এম এইচ আমিনুল ইসলাম বলেন, “এই মামলার আসামির খালাস পাওয়ার কথা ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো এভিডেন্স ছিল না। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, আসামিরা খালাস পাবে।”

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি সেলিমের এই আইনজীবী।