‘সোনার হরিণ’ পেতে কমলাপুরে ভিড়

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির পঞ্চম দিন কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 05:53 AM
Updated : 22 August 2017, 06:00 AM

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনের তেইশটি কাউন্টারে একযোগে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এদিন দেওয়া হচ্ছে ৩১ আগস্ট ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকেট।

এবার কোরবানির ঈদে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সেদিনের টিকেটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।

অগ্রিম টিকেট নেওয়ার জন্য আগের দিন থেকে লোকজন ভিড় করছেন কমলাপুরে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন।

এদিন ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। ৩৫ শতাংশ টিকেট কোটার জন্য রেখে বাকি টিকেট কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনের ২ হাজার ৬০৬ টি টিকেটও কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে।

নেত্রকোণার হাওর এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য সোমবার সকাল থেকে স্টেশনে আছেন আতিকুর রহমান নঈম। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় কাঙ্ক্ষিত টিকেট পেয়েছেন তিনি।

“সারারাইত কষ্ট করছি। গরমের কারণে ঠাণ্ডা লাইগা গ্যাছে। কিন্তু এখন তো আনন্দ আর আনন্দ। এত কষ্টের পরে মনে হইতেসে সোনার হরিণ পাইছি। ঈদের আগে টিকেটের জন্য যে যুদ্ধ করা লাগে, টিকেট সোনার হরিণের চেয়ে কম না।”

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকেটের জন্য এদিন ভিড় ছিল বেশি। রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য সোমবার সকাল থেকে স্টেশনে অপেক্ষায় থাকার কথা জানালেন ওমর ফারুক। প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকালে টিকেট পেয়েছেন তিনি।

“অনেকদিন পর বাড়ি যাব। টিকেট পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে। ট্রেনে ঝুঁকি কম বলে টিকেটের জন্য এতো কষ্ট করি।”

অন্য বছর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন ট্রেনের টিকেট কাউন্টারেও ভিড় কম থাকে। তবে মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলের কাউন্টারগুলোতেও প্রচণ্ড চাপ দেখা যায়। 

চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতীর টিকেটের জন্য সোমবার থেকে স্টেশনে অপেক্ষায় থাকার কথা জানালেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উজ্জ্বল বড়ুয়া। সড়কপথের ‘ঝামেলা এড়াতে’ ঈদের ছুটিতে ট্রেনে বাড়ি যাওয়ার কথা বললেন তিনি।

“পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা যেতে লাগে ৮-৯ ঘণ্টা। আর জ্যামে পড়লে তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে কষ্ট করে হলেও ট্রেনের টিকেট নিতে এসেছি।”

প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও যাত্রীদের অভিযোগ ছিল এসি টিকেট নিয়ে। রাজশাহীর ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেট চেয়েছিলেন লুৎফর রহমান নামের এক যাত্রী। তবে টিকেট পাননি তিনি।

“আমি সিরিয়ালের শুরুতেই ছিলাম। আমার সিরিয়াল নম্বর ১৫। কিন্তু দুটি এসি টিকেট চাইলে আমাকে দেওয়া হয়নি। আমরা সকাল থেকে দেখলাম রেলের লোকজন কাউন্টারের ভেতরে গিয়ে টিকেট কিনে নিচ্ছে। তাহলে আমরা টিকেট পাব কেমন করে?”

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানালেন, গতবছরের চেয়ে এবার অগ্রিম টিকেট প্রত্যাশীর ভিড় বেশি বলে তাদের মনে হয়েছে। আর ৩১ আগস্টের টিকেটের জন্য এবার সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে মঙ্গলবার।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “টিকেট তো নির্ধারিত। তাই সবাইকে প্রত্যাশিত টিকেট দেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে লোকজন অভিযোগ করে বেশি। আমাদের যা টিকেট আছে, তার বাইরে তো আমরা দিতে পারব না।”

তারপরও অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার মাধ্যমে যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করার কথা জানিয়ে সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, রেলের কারও পক্ষে ভেতরে গিয়ে টিকেট কেনা সম্ভব না।