আগের দিন দুপুর থেকে স্টেশনে অবস্থান নিয়ে রাত জেগে অপেক্ষার পর অবশেষে কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাওয়ার পর কারো কারো মুখে যেমন ছিল স্বস্তির হাসি, আবার চাহিদামাফিক টিকেট না পাওয়ায় অনেকের চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ।
রোববার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনের তেইশটি কাউন্টার থেকে একসঙ্গে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। দেওয়া হয়েছে ২৯ অগাস্টের টিকেট।
শুক্রবার প্রথম দিন ২৭ অগাস্টের এবং শনিবার ২৮ অগাস্টের টিকেট বিক্রি হয়। ২১ অগাস্ট বিক্রি হবে ৩০ আগস্টের টিকেট; আর ২২ অগাস্ট বিক্রি হবে ৩১ আগস্টের টিকেট।
রোববার ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হয়। ৩৫ ভাগ কোটার জন্য রেখে বাকি টিকেট কাউন্টার থেকে পাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনের দুই হাজার ৬০৬টি টিকেটও কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
রোববার টিকেটের জন্য মানুষের লাইন ছিল টার্মিনাল ভবন ছাড়িয়ে স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত।
“টিকেটের অনেক ক্রাইসিস। অনেকেই ট্রেনে যেতে চায়। পাব কি না, এই নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে আগের দিন চলে এসেছি। এখন খুব ভালো লাগছে।”
বাসিরের আগে শনিবার সকাল ৯টায় কমলাপুর এসেছেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাফর ইমাম। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর সকাল পৌনে ৯টায় তিনি রাজশাহীর সিল্কসিটি ট্রেনের টিকেট পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “অনেক কষ্ট করেছি। কাল সবাই যখন টিকেট কিনছে তখন আমি ছিলাম পরের দিন সিরিয়ালের সামনের দিকে। গতকাল টিকেট শেষ হয়ে গেলে আমরা কজন লাইনে দাঁড়িয়েছি। সারারাত ছিলাম। এখন টিকেট পাওয়ার পর খুব ভালো লাগছে। কষ্ট হলেও বাড়ি যেতে আর কোনো বাধা রইল না ভেবে স্বস্তি লাগছে।”
দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য এসেছেন মো. ফাহাদ রেজা। আগেভাগে না এলে এসি টিকেট পাওয়া যায় না, এ কারণে শনিবার দুপুর থেকেই অপেক্ষা করছেন স্টেশনে।
“শুরুতে আমরা ২০ জন ছিলাম। পরে বিকালের দিক থেকে লোকজন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। ভোর হওয়ার আগেই পুরো স্টেশন লোকে ভরে গেছে। সামনে ছিলাম বলে এসি টিকেট পেয়েছি।”
“পরীক্ষা থাকায় বাড়ি যেতে দেরি হবে। নইলে আগেই চলে যেতাম। যেকোনো সময় চাইলেই বাসে যাওয়া যায়। কিন্তু বাসে সময় বেশি লাগে, কষ্ট বেশি। এজন্য আজ কষ্ট হলেও ট্রেনের টিকেট কিনে নিয়েছি।”
নারীদের কাউন্টারে ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। মাত্র দুটি কাউন্টার থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সিনথিয়া নামের একজন।
“আমাদের জন্য মাত্র দুটি কাউন্টার। এর একটি থেকে আবার রেলের কর্মচারিদের টিকেট দেওয়া হয়। ফলে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কাউন্টার আরও বাড়ানো দরকার।”
রোববারও এসি টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. ইবনে আসিফ।
“আমার ভাই গতকাল দুপুর ৩টা থেকে এখানে ছিল। আমি এসেছি রাত ১২টায়। আমি ২৭ নম্বর সিরিয়ালে ছিলাম। কিন্তু এসির কোনো টিকেট পাইনি। ঈদের আগে এসি টিকেট যায় কই,” প্রশ্ন তার।
“বিভিন্ন জায়গায় বন্যায় রেললাইনের ক্ষতি হয়েছে। আমরা গতকাল কয়েকটি জায়গায় গিয়েছিলাম। আমরা ঈদের আগে ঢাকা থেকে দিনাজপুর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে পারব। এছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে পারবে।”
এসি টিকেট না পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসি টিকেট কম এবং বিভিন্ন স্টেশনের কোটা থাকায় সবাইকে এসি টিকেট দেওয়া সম্ভব হয় না।
আর নারীদের জন্য কাউন্টার এ বছর বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান রেলওয়ের মহাপরিচালক।