শুক্রবার সকালে টিকেট বিক্রির শুরুতেই গাবতলী ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ সারি; লম্বা সময় অপেক্ষার পর তারা পাচ্ছেন বাড়ি ফেরার টিকেট।
এবার কোরবানির ঈদের সরকারি ছুটি নির্ধারিত আছে ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর। তবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তাতে পরিবর্তন হতে পারে।
কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা জানান, ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন ৩১ অগাস্ট টিকেটের চাহিদা বেশি। সেদিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় অনেকেই অফিস শেষ করে বাড়ির পথে ছুটবেন।
সকাল সাড়ে ৬টায় শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারে ৩১ অগাস্টের টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে পরে ১ সেপ্টেম্বরের দুটো টিকেট পান গার্মেন্টস কর্মী আলী আজম, যিনি ঈদ করতে যাবেন বগুড়ায়। আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কাধাক্কির কারণে ঘামে ভিজে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
“আমি ছিলাম তিন নম্বর সিরিয়ালে। কিন্তু টিকেট চাইতেই বলে ৩১ তারিখ বিকালের কোনো টিকেট নাই। তাহলে টিকেট গেলো কোথায়? হয়তো পরে বেশি টাকায় বিক্রি করার জন্য রেখে দিয়েছে। ওরাতো এই রকমই করে।”
আজম জানান, তিনি নামবেন বগুড়া, কিন্তু তাকে নওগাঁর টিকেট কাটতে হয়েছে। অন্য সময় যেখানে টিকেটের দাম ৩৫০ টাকা পড়ে, এখন গুণতে হয়েছে ৪৭০ টাকা।
সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল ৭টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হলেও তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন ৬টার আগে। আর টিকেট হাতে পান সোয়া ৮টায়।
“আমি ১ তারিখ বিকালের ৫টা টিকেট পাইছি। ৩১ তারিখের টিকেটে চাপ বেশি। ঈদের সময় হওয়ায় ভাড়া একটু বেশি।”
টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইনে দেখা যায় গাবতলীর এস আর ট্রাভেলসের কাউন্টারে। সেখানে ২৯ অগাস্টের গাইবান্ধার টিকেট পেয়ে উল্লাস প্রকাশ করছিলেন রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক সবুজ মিয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি প্রথমে ৩১ তারিখের, এরপর ৩০ তারিখের টিকেট চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা দেয় না। বাধ্য হয়ে ২৯ তারিখের তিনটি টিকেট নিতে হয়েছে।”
সবুজ বলেন, “খুব ভোরে কাউন্টারে এসেছিলাম, টিকেট দেওয়ার শুরু থেকেই আমি দেখেছি। তারা ৩০ ও ৩১ অগাস্টের টিকেট বিক্রি না করে রেখে দিয়েছে। ওই দিনের টিকেটগুলো হয়তো গাড়ি ছাড়ার আগে আগে বেশি দামে বিক্রি করা হবে।”
শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের মাস্টার জাকির হোসেন অবশ্য ভাড়া বেশি নেওয়া বা ‘টিকেট হাতে রেখে দেওয়ার’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
“আর ভাড়া আমরা বিআরটিএ’র নির্ধারিত হারেই নিচ্ছি। অন্য সময় বরং কিছু কম রাখা হয়।”
সকাল সাড়ে ৭টায় কল্যাণপুরে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারে এসে লাইনে দাঁড়ান মিরপুর-১ নম্বরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে লীনা আক্তার।
এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর জয়পুরহাটের একটি টিকেট কেনার সুযোগ পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।
লীনা বলেন, “এখানে লাইনে সুন্দরভাবে টিকেট দিচ্ছে। তবে ভাড়া একটু বেশিই নিচ্ছে। ঈদের সময় যেমন বেশি নেয়।”
সকাল সাড়ে ৭টায় কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে এসে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৫০০ টাকার জায়গায় ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট তিনি পেয়েছেন, তবে তাতে যাওয়া যাবে খুলনা পর্যন্ত।
বাকি পথ ‘ভেঙ্গে ভেঙ্গে’ অন্য বাসে যেতে হবে বলে জানান গাজীপুরের একটি কলেজের ছাত্র হাফিজ।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার মোহাম্মদ আলম জানান, তারা ২৪ অগাস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার টিকেট বিক্রি করছেন।
“ফিরতি ট্রিপে যাত্রী না থাকায় আমরা ভাড়া অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি নিচ্ছি। তবে সেটা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নয়।”
গাবতলীর হানিফ কাউন্টার থেকে ৩০ অগাস্টের কুড়িগ্রামের চারটি টিকেট পেয়েছেন পোশাককর্মী মাইদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “টিকেটের জন্য ভোর রাত থেকে এই কাউন্টারে অপেক্ষায় ছিলাম, আমি চেয়েছিলাম ৩১ তারিখের টিকেট, কিন্তু তারা বলল নেই, পরে ৩০ তারিখের টিকেট নিতে হয়েছে।”
ওই কাউন্টারের টিকেট মাস্টার মাজহারুল ইসলাম লিটন জানান, তারা টিকেট বিক্রি শুরু করেছেন সকাল ৬টা থেকে। ৩১ অগাস্টের টিকেট শেষ হয়ে গেছে প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যেই।
“ওইদিনের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ৩০ তারিখের টিকেটও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।”