বন্যায় বন্ধ ৩৫২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বন্যার কারণে দেশের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2017, 01:23 PM
Updated : 17 August 2017, 01:25 PM

এর আগে গত এপ্রিল-জুনেও বন্যায় বন্ধ হয়েছিল সহ্রসাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বন্যা কবলিত জেলাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তলিয়ে যাওয়া ছাড়াও দুর্গতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে বগুড়ায় বাঁধের ওপর চলছে কিছু স্কুলের পাঠদান। এর বাইরে আর কোথাও আপদকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই।

জেলা প্রশাসকরা বলছেন, বন্যার পানি নেমে গেলে স্কুল-কলেজগুলো মেরামত করে বাড়তি ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন তারা। তবে সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা জানাতে পারেননি কেউ।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এই হাসপাতালটি।

বন্যায় এরইমধ্যে ২২ জেলায় তিন হাজার ৫২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ।

তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাটে পানি নামতে থাকায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ আহম্মদ বলেন, “প্রতিটা জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সে জেলার সমস্যা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কারও বই নষ্ট হয়ে গেলে তাদের বই সরবরাহ করা হবে। অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার দরকার হলে তা নেওয়া হবে।”

ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের মানুষ।

এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে জামালপুর জেলায়। সেখানেই বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির চিত্র উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্যার পানি ওঠায় এ পর্যন্ত জেলার ৯১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বন্যা শেষ হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বলছেন, বন্যার পানি কমতে থাকায় বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমছে।

তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানি ওঠার কারণে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি, বন্যা দু্র্গতরা আশ্রয় নেওয়ায় ৩৯৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এতদিন।

“এখন পানি কিছুটা কমছে, ২০০ এর মতো প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। আমরা অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করে এ ধাক্কাটা সামলে নেব।”

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বন্যার পানি ওঠায় তার জেলার ২১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ আছে। মোট ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বন্যার পানিতে প্লাবিত কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা।

এরইমধ্যে পানি কমতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে মনে হচ্ছে। এরপরই আমরা বিদ্যালয়গুলো চালু করতে পারব। আর বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাস ও এলাকার স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হবে।”

ক্ষতি পোষাতে ছুটির দিনেও ক্লাস নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

বন্যার কারণে তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সিরাজগঞ্জে।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সিরাজগঞ্জের ১৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠলেও এর মধ্যে ১১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে ২৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

“ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এগুলো পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে তা বলতে পারছি না।”

বগুড়ায় ৭৬টি প্রাথমিক, ২টি মাদ্রাসা ও মাধ্যমিকের ৮টিসহ মোট ৮৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবগুলোই পানি উঠার কারণে বন্ধ হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্র নেই কোনোটিতেই। জুন মাসের মাঝামাঝিতে সপ্তাহখানেক বন্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার গত সপ্তাহ থেকে বন্ধ আছে।”

ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের মানুষ।

এখন  বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাঁধের উপর আমরা কিছু স্কুলকে শিফট করেছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব শিক্ষার্থী বাঁধে থাকতে এসেছে, তারা এখানে ক্লাস করছে। পড়াশুনাটা চালিয়ে যাচ্ছে।”

এছাড়া এনজিওর সহায়তা নিয়ে পিএসসি ও জেএসসির শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালিয়ে নেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

বগুড়ায় এরইমধ্যে পানি নামতে শুরু হয়েছে জানিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, “তবে কমার হারটা ধীর। যে হারে পানি বেড়েছে, সে হারে কমছে না। গত ৬ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এটা কবে নাগাদ কমবে তা তো বলা যাচ্ছে না।”

তার জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো বন্যা হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক।

“শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ওই উপজেলার জন্য কিছু বরাদ্দ রাখা গেলে তা কাজে আসবে।”