সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধুস্মরণ

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল নানা আয়োজন। কণ্ঠশিল্পীর গানের সুরে, বাকশিল্পীর কবিতার ছন্দে, বক্তার কথায়, শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্মে ইতিহাসের মহানায়ককে জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2017, 03:25 PM
Updated : 15 August 2017, 03:25 PM

শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।

এর ধারাবাহিকতায় ১৫ ও ১৬ অগাস্ট প্রতিদিন সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ছিল প্রথম দিন।

এদিন একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আলোচনা পর্বে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর ও শহীদ কর্নেল শাফায়েত জামিলের মেয়ে আফরোজা জামিল।

দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পর্বের শুরুতেই গানের সুরে সুরে জাতির জনককে স্মরণ করা হয়। একাডেমির ক্ষুদে কণ্ঠশিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। পরের গানটি ছিল শিশুদের। তারা পরিবেশন করে ‘ধন্য মুজিব ধন্য’। ‘তুমি বিনেরে মুজিব’ গানের সুরে বেনজির সালাম সুমির পরিচালনায় পরিবেশিত হয় বৃন্দ নৃত্য।

দ্বিতীয় দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় গানের শিরোনাম ছিল ‘বিচার চাই বিচার চাই’। স্বাধীনতার স্থপতিকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মলয় কুমার গাঙ্গুলী গাইলেন ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’।  ‘দুঃখিনী বাংলা জননী বাংলা’ শিরোনামের সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন আলী। মনোরঞ্জন ঘোষাল গাইলেন ‘ও দরদী নাইয়ারে তুমি কি টুঙ্গীপাড়া যাও’। জাতির জনককে হারানো বেদনা উচ্চারিত হয় হয় নমিতা ঘোষের কণ্ঠে।

‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে পাঠ করেন এসএম মহসিন। নির্মলেন্দু গুণের ‘সেই রাত্রীর কল্পকাহিনী’ ও কবি সুজন বড়ুয়ার ‘আমাদের জন্য’ কবিতা আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ। ছিল বিভিন্ন নাট্যদলের নাটকের কোরিওগ্রাফি পরিবেশনা।

যতদিন পৃথিবী থাকবে, ততদিন টিকে থাকবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ : নির্মলেন্দু গুণ

শিশু একাডেমিতে ছিল ভিন্নরকম আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিশুদের জন্য কথামালার আয়োজন ছিল। বৃষ্টিস্নাত বিকালে অভিবাবক ও শিশু-কিশোররা তন্ময় হয়ে শুনলেন কবি নির্মলেন্দু গুণের কথামালা।

তার সঙ্গে পাশেই বসেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, শিশু সাহিত্যিক আনজীর লিটন। ছিলেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি।

সেলিনা হোসেন শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে বলেন, “শিশু-কিশোরদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান ছিলেন অন্তঃপ্রাণ। দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য, আগামী ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য বঙ্গবন্ধু শিশুদের জন্য নানা কার্যকর প্রদক্ষেপ নিয়েছিলেন।”

নির্মলেন্দু গুণ বলেন, “পঁচাত্তরের পর জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রথম কবিতা লিখেছিলাম আমি। সে অনেক বছর আগে কথা। যখন বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যেত না, পরিস্থিতি ছিল প্রতিকূলে, তখন কবিতায় আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছিলাম।”

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “রাত ছিল খুব প্রিয়। ঘুরে বেড়াতাম শহরের নানা অলি-গলিতে। ১৫ অগাস্টের রাতেও ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। মধ্যরাতে শাহবাগে ফেরার সময় দেখি কিছু ট্যাংক দাঁড়িয়ে। তখন আমার মনে খটকা লেগেছিল। তখন আমি কিছু আঁচ করতে পারিনি। কোনো রকম বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে শুনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়েছে। আমি বিস্ময়ে, দু:খে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম।”

নির্মলেন্দু গুণ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর দেহ নেই পৃথিবীতে, কিন্তু তার প্রাণ রয়েছে এই বাংলায়। বঙ্গবন্ধুর আত্মার মৃত্যু নেই।

যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন। যতদিন পৃথিবী থাকবে, পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, ততদিন টিকে থাকবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।”

জাতীয় জাদুঘর

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে জাতীয় জাদুঘর।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘরে ও আহসান মঞ্জিল জাদুঘর, সিলেটের ওসমানী জাদুঘর, চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘর ও ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা বিনা টিকিটে শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীরা পরিদর্শন করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিশু-কিশোরদের জন্য ছয়টি জাদুঘরে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।