স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের ‘গাফিলতিতে’ আটকে থাকা এই প্রতিবেদনের জন্য মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
নবাবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অখিল সরকার মঙ্গলবার বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিকিৎসকরা দায়িত্ববান নন। তারা দায়িত্বশীল হলে অনেক আগেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হয়ে যেত।”
ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে মেডিকেল কলেজটির ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনকে গত ৫ অগাস্ট ফোন করলে কর্মস্থলের বাইরে আছেন বলে জানান তিনি।
এরপরে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার, মঙ্গলবারও কয়েক দফা তার মোবাইলে ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
তদন্ত কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, ওই প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে থাকা একজন নারী চিকিৎসক সম্প্রতি অন্যত্র বদলি হয়েছেন বলে রোববার হাসপাতালে গিয়ে জানতে পেরেছেন তিনি।
কাতার ফেরত কাঠমিস্ত্রী ভক্ত সরকার (২৩) গত ১৩ মার্চ নবাবগঞ্জ থানার সোনাবাজু গ্রামে প্রতিবেশী বখাটেদের হাত খুন হন। দুদিন পর নবাবগঞ্জ থানায় প্রতিবেশী হাসান (২২) এবং তার দুই বন্ধু শাকিল ও আব্দুল্লাহকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন ভক্তের ভাই সুশান্ত সরকার।
পুলিশের খাতায় পলাতক অপর দুই আসামি শাকিল ও আব্দুল্লাহ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহত ভক্ত সরকারের স্বজনরা।
মামলায় আপস করতে ওই আসামিদের পরিবার অনবরত চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার মামা খগেন মণ্ডল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পলাতকরা প্রভাবশালী ও বিত্তবান পরিবারের সন্তান। তাদের আত্মীয়রা ইতালি প্রবাসী। তারা মামলার তদন্ত ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তাদের পক্ষে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।”
পলাতক দুজনকে এখনও কেন ধরা হয়নি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের বাড়িতে বা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আর হাসান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্যই দেননি।”
তবে যে ঘটনা নিয়ে বিরোধ থেকে ভক্ত সরকারকে খুন করা হয়েছে তার সূত্রপাত ওই দুই আসামির একজন শাকিল থেকে বলে মামলায় বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভক্তের বড় বোন মনি সরকার (৪০), তার ছেলে সাগর (১৩), বড় ভাইয়ের স্ত্রী কানন সরকার (৩৮) ও তার মেয়ে কোয়েল সরকার ওরফে আলো (১৮) সোনাবাজুর বিজয় বাড়ির পূর্বপাশে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন। ছবি তোলা শেষ হলে সাগরকে কোয়েলের ছবি দেখাতে বলে এলাকার ‘বখাটে’ শাকিল। ওই ছবি তার মোবাইলেও দিতে বলে।
এ সময় সাগর জানায়, তার কাছে কোনো ছবি নেই, মোবাইল তার মায়ের কাছে। তখন শাকিল তার বন্ধু হাসান (২২) ও আব্দুল্লাহকে ডেকে নিয়ে আসে। তারা তিনজনে মিলে সাগরের কাছ থেকে ছবি নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করে। সাগর ছবি দিতে অস্বীকার করলে হাসান তাকে চরথাপ্পড় দেয়। এমনকি হত্যারও হুমকি দেয়।
সাগর এই ঘটনা তার মাকে জানানোর পর পরিবারের অন্যদের কানে যায়। এক পর্যায়ে ভক্ত সরকার বিষয়টি নিয়ে হাসান, শাকিল ও আব্দুল্লাহর কাছে গেলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর এলাকার গণ্যমান্য হিসেবে পরিচিত গুরুদাস ও সদের আলীসহ কয়েকজন বিষয়টির মীমাংসা করে দেন।
এরপরে রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে বিজয় সরকারের বাড়ি পূর্বপাশে কাঁচা রাস্তায় দাড়িয়ে কীর্তন দেখার সময় পিছন থেকে ভক্ত সরকারের মাথায় আঘাত করা হয় বলে মামলায় বলা হয়।
“রড দিয়ে হাসান মাথায় আঘাত করে। ভক্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।”
পরে মামা খগেন মণ্ডলসহ অন্যরা ভক্তকে প্রথমে বারুয়াখালী ফয়সাল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।