খুলনার ডুমুরিয়া থানা পুলিশ সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের মোল্লাকে থানায় নিয়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর স্থানীয় দুই তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে এই অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াটের সদস্যরা।
দুই দফা বিস্ফোরণ ও গুলির পর সেখানে খুলনা বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্র সাইফুলের লাশ পাওয়া যায়।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “সাইফুল নব্য জেএমবির একজন সদস্য, তবে আগে শিবির করতেন। তার বাবা আবুল খায়ের মোল্লা একটি মসজিদের ইমাম। তিনি জামাতের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি।”
সাইফুল ওই এলাকার উলা দাখিল মজিদিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাসের পর সরকারি বিএল কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করেন। তিনি জঙ্গিবাদে জড়িত ছিলেন না বলে তার ছোট বোন ইরানী খাতুনের দাবি।
ডুমুরিয়ার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, ঢাকায় সাইফুলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তার বাবাকে থানায় এনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা।
“তিনি বলেছেন, চাকরির সন্ধানে যাওয়ার কথা বলে গত ৭ অগাস্ট ঢাকায় যায় সাইফুল। সর্বশেষ গত রোববার ফোনে সাইফুলের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ হয়। সে সময় বলেছিল, সোমবার খুলনা ফিরতে পারে।”
আবুল খায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়ার কথা বললেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ এখনই তা প্রকাশ করতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ সুপার মোল্লা নিজামুল হক জানান, সাইফুল ঢাকায় গিয়ে খুলনার দুই তরুণের সঙ্গে থাকতেন। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
এই দুজন হলেন- নোয়াকাঠি গ্রামের আবু ওয়াহেদের ছেলে মো. সানি (২২) ও একই এলাকার জালাল সরদারের ছেলে ইসান (২১)।
সকালে পান্থপথের অভিযান শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সাইফুল এক সময় মাদ্রাসায় পড়তেন, জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন।
“জামায়াত শিবির না হলে আজ জাতির পিতার মৃত্যু দিবসে, শোক দিবসে আরেকটি ঘটনা ঘটাবে, এটা ঘটাতে পারত না। যারা বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে, তারাই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আজকে এই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেছিল।”
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবনে গিয়ে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
আইজিপি বলেন, “ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরকে কেন্দ্র করে অগাস্টের মিছিলে তারা আত্মঘাতী বোমা হামলা করবে এবং শত শত লোক মেরে ফেলবে- এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল জঙ্গিরা।”
তিনি জানান, পুলিশ অভিযান শুরু করার পর জঙ্গি সাইফুল একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই হোটেল কক্ষের দরজা উড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ গুলি শুরু করলে সে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটায়। তাতে হোটেলের করিডোরের দেয়াল ধসে নিচে পড়ে যায়।
“এতে বোঝা যাচ্ছে, অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরক ছিল। এটা যদি কোনো জনসভা বা সমাবেশে ব্লাস্ট করত তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হত।”