জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আয়োজনে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে তিনি এ কথা বলেন।
বিচারপতি সিনহা বলেন, “এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আরো অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত ছিল। কিন্তু ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটির জন্য আমরা তাদের আর বিচারে সোপর্দ করতে পারি নাই।
“যদিও আমাদের রায়ে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, এটা একটা ক্রিমিনাল কন্সপিরেসি- পরিকল্পিতভাব হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদেরকে বিচারের সোপর্দ করার জন্য।”
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে দ্বিতীয় বারের মতো রক্তদান কর্মসূচি পালন করছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি সিনহা বলেন, “তাদের (হত্যাকারীদের) উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সমস্ত পরিবারকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে পৃথিবীর কোনো হত্যার মিল পাওয়া যায় না। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই, যে কি রকমভাবে তারা হত্যা করেছিল।”
১৫ আগস্টের ওই হত্যাকাণ্ডকে ‘কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তার বিদ্রোহ’ বলে অনেকে চালানোর চেষ্টা করলেও এটা যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিল তার প্রথম প্রমাণ মাত্র দেড় মাসের মধ্যে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেওয়া। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বা দায়মুক্তির এই অধ্যাদেশ জারি করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি এই বিচার বিভাগের একজন সদস্য হিসেবে অত্যন্ত গর্ববোধ করছি; এই সুপ্রিম কোর্টই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে এই বিচারের পথ প্রশস্ত করেছিল।”
‘ট্রিটমেন্ট বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিতে সিঙ্গাপুরে ক্যান্সারের চিকিৎসা বাদ রেখে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলে প্রধান বিচারপতি জানান।
“তখনও আমি জানি না, আমি বাঁচতে পারবো কি না। যাই হোক, ট্রিটমেন্ট বাদ দিয়ে আমি চলে আসলাম। শপথ নিয়ে তারপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিলাম।”
আলোচনা সভার মঞ্চে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি আসন গ্রহণ করলেও তাদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন শুধু জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতির জনককে নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। যখন ৭০ সালে নির্বাচন হয় তখন আমি বিএ ক্লাসের ছাত্র। তখন ইস্ট পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনো নেতা ছিল না এবং কেউ কল্পনাও করে নাই।
“তিনি ছিলেন বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেখানে আমি আজকে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হতে পেরেছি। পাকিস্তান থাকলেও হয়তো হাই কোর্টের বিচারপতি হতে পারতাম। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি বা প্রধান বিচারপতি হওয়া কল্পনার বাইরে ছিল।
“কাজেই বঙ্গবন্ধুকে এই জন্যে স্মরণ করছি যে, আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক এবং সেই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির আসনে আসীন আছি।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সহযোগিতায় কর্মসূচিতে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানসহ সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রক্ত দেন।
এর আগে আলোচনা সভায় হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।