পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছেন, নিহত ওই যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছে।
এক জঙ্গির অবস্থানের খবরে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে ওলিও ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই হোটেল ভবন মঙ্গলবার ভোরে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকার প্রতিটি গলি এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন, সোয়াট সদস্যরা অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’।
১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল পান্থপথের অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, সন্দেহভাজন এক জঙ্গির অবস্থানের তথ্য পেয়ে সোয়াটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। সেখানে ‘নাশকতার সরঞ্জাম’ থাকতে পারে বলেও তাদের কাছে খবর আছে।
পুলিশ কয়েক ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে চারতলা হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।
চতুর্থ তলার ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একজনের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে।
“হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্য অনুযায়ী ওই যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম, বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। বি এল কলেজে সে অনার্স পড়ছে। আমরা ধারণা করছি, ওই যুবকই নিহত হয়েছে।”
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাইফুলের ওপর আগে থেকেই নজর রাখছিল পুলিশ।
“সে নব্য জেএমবির সদস্য; আগে শিবির করত। তার বাবা আবুল খায়ের মোল্লাও খুলনার জামাত নেতা।”
পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নিহত যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার তথ্য পায়।
“হোটেলে অনুসন্ধান চালানোর সময় তার কক্ষ থেকে আমরা কোনো সাড়া পাইনি। তাকে সারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সে করেনি। সে প্রথমে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। অভিযান শুরু হলে সে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়।”
ছুটির দিনের সকালে রাস্তার এই অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয় উদ্বেগ। যান চলাচল বন্ধ থাকায় স্কয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আসা অসুস্থ এক ব্যক্তিকে পুলিশের সহযোগিতায় নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পৌনে ১০টার দিকে বিকট বিস্ফোরণের সঙ্গে হোটেল ভবনের চতুর্থ তলার দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে নিচে পড়লে তৈরি হয় আতঙ্ক। স্কয়ার হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালের ভেতরে দিকে চলে যান।
এর পরপরই সামনের রাস্তা দিয়ে আহত অবস্থায় একজনকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহার হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে যাচ্ছিলেন। বিস্ফোরণের ফলে ইটের টুকরো ছিটকে গিয়ে তার মাথায় লাগে।
কিছু সময় পর সোয়াট সদস্যরা হোটেলের চতুর্থ তলার ওই অংশে দেখা যায়। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক পরে ঘটনাস্থলে আসেন।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে হোটেল ভবনের চতুর্থ তলায় প্রবেশ করেন পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। সেখানে আরও বিস্ফোরক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখবেন তারা।