হাতাহাতির সেই ঘটনায় ঢাবি শিক্ষক রবিউলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিন আন্দোলনরত দুই নারী শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এনেছেন সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 12:28 PM
Updated : 13 August 2017, 12:28 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের আহ্বায়ক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের কাছে বৃহস্পতিবার অভিযোগ দেন ওই দুই ছাত্রী।

এই অভিযোগকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবিউল বলেছেন, সেদিনের ঘটনা নিয়ে অসত্য অভিযোগ তুলে তার সম্মানহানি ঘটানোর প্রয়াস চালানো হচ্ছে।

গত ২৯ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিন সিনেট ভবনের ফটকে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতি ঘটে। এসময় দুইজন শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়।

ওই সময় সেখানে থাকা ছাত্র ফেডারেশন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের দুই শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রী অভিযোগ জমা দিয়েছে। উপাচার্যের অনুমতি পেলে তদন্তের জন্য কাজ করা হবে।”

আলাদা করে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও দুজনের অভিযোগই একই।

তারা বলেছেন, সিনেট অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি না থাকার প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করতে যান তারা। শিক্ষকেরা তাদের ‘ঘাড় ধরে’ বের করে দেন এবং ধাক্কাধাক্কি করেন।

তখন সহকারী প্রক্টর রবিউল এক ছাত্রীর গলা জড়িয়ে ধরেন এবং তাকে ছাড়াতে গেলে অন্য ছাত্রীর ওড়না ধরে টান দেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

সেদিন শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির মধ্যে রবিউল ইসলাম (নীল শার্ট পরা)

এবিষয়ে রবিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনে ছিলেন তিনি। এই ধরনের বহু ঘটনায় তিনি থাকলেও কোনো দিন কেউ যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেনি।

এবারের ঘটনাটি গণমাধ্যমে ‘উদ্দেশ্যপূর্ণ ও নেতিবাচকভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

“চাকরির ১৭ বছর হচ্ছে, আমার একটা নীতি-নৈতিকতার জায়গা আছে। আমি জানি, কীভাবে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয়।”

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রবিউল বলেন, “আন্দোলনমুখী ছাত্ররা মেইন গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়, কিন্তু তারা শিক্ষকদের উপর হামলা করে।

“আমরা তাদের ঢুকতে দিচ্ছিলাম না; এই সময়ের মধ্যে হঠাৎ করে এই মেয়েটা আমার কোলের মধ্যে ঢুকে চিৎকার করছে; সেখানে সবাই দেখেছেন। প্রথম দিকে আন্দোলনের মধ্যে তারা ছিল না; যখন গেইট ভেঙে ভেতরে ছাত্ররা ভেতর ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়; তখন ওই দুটো মেয়ে মধ্যে ঢুকে যায়।”

“আচমকা একটি মেয়ে আমার কোলের মধ্যে ঢুকে ক্যামেরার দিকে চেয়ে চিৎকার দেয়- ‘দেখেন আমাদেরকেও ছাড়ছে না, আমাদেরকেও নির্যাতন করছে; ফটো তোলেন দেখেন আপনার দেখেন।”

ওড়না টানার অভিযোগ অস্বীকার করে রবিউল বলেন, “ছবিতে দেখবেন, পেছনে কমলা রঙের (জামা পরা) মেয়েটা দৌড়ে আসছে, তার পরনে ওড়না আছে। ছবিটা ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের মধ্যে একজনের হাতে ওড়নাটা পেঁচিয়ে আছে।”

এই শিক্ষক বলেন, “এ বিষয়টাকে চট করে যৌন হয়রানি, নিপীড়নের কাতারে নিয়ে গিয়ে ব্যাখ্যা ছাত্র কিংবা ছাত্রী হিসেবে তাদের উচিৎ হয়নি। আমাদের জন্য এটা খুব লজ্জাজনক, খুব দুঃখজনক।”

সহকর্মী রবিউলের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিনের ঘটনাটা যখন ঘটে, তখন যারা উপস্থিত ছিল এবং যারা ভিডিও করে, আমরা কিন্তু সব কিছু দেখেছি।

“যখন কোনো আন্দোলন হয়, তা একজন মেয়েকে জাপটে ধরা বা ‍ওড়না টেনে ধরার উপযুক্ত জায়গা না। সেখানে এরকম এক শিক্ষকের শুধু শুধু সম্মানহানি করা, তারা ঠিক করছে না। তারা একটা সম্পূর্ণ অসত্য বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”