এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
তিন বছর আগে একজন কাউন্সিলর ও একজন আইনজীবীসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যার ওই ঘটনায় গত জানুয়ারিতে ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত। তাদের মধ্যে সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ে জামাই।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে রোববার রায় দেবে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
তার আগের দিন মামলার বাদী নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই মামলার রায়ের দিকে। আমরা স্বজন হারিয়ে দিশেহারা। আমরা চাই, এই ঘটনায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ প্রত্যেকের ফাঁসি।
“র্যাব আমাদের রক্ষক হয়েও ভক্ষকের মতো আচরণ করেছে। তারা আমাদের নিরাপত্তা দেবে, কিন্তু তারা আমার স্বামীসহ সাতজনকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সাতজন মানুষকে হত্যা করা হয়নি, সাতটি পরিবারকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।”
নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে এবং তা দ্রুত কার্যকর করা হবে প্রত্যাশা জানান তিনি।
ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন ও তার গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামসুন নাহার নুপুর বলেন, “আমার স্বামীর তো কোনো দোষ ছিল না। সে তো নিরাপরাধ ছিল। তাকেসহ সাতজন মানুষকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হল।
“র্যাব প্রশাসনের লোক হলেও নূর হোসেনের টাকায় প্রভাবিত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাল। আমাদের সাতটি পরিবার তছনছ হয়ে গেল। পরিবারের উপাজর্নক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার মেয়ে ওর বাবাকে দেখতে পারল না। মেয়েটা বাবার ছবি ধরে শুধু কাঁদে।”
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের সংশ্লিষ্টতায় র্যাব সদস্যরা ওই সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে বলে তদন্তে উঠে আসে।
রায়ে র্যাব-১১ এর তৎকালীন কমান্ডার সেনাবাহিনীর বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা, বরখাস্ত মেজর আরিফ ও নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, বাকি নয়জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড। এই মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য।
খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই রিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আমাদের ভাই হারিয়েছি। আমরা চাই, খুনিদের ফাঁসি হোক।”
নিহত সাতজনের মধ্যে আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমও ছিলেন।
তার বাবা আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, “ছেলে মারা যাওয়ার পর টাকার অভাবে আমার ছেলের বউ নাতনিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
“আমরা গরিব মানুষ, আমাদের আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই, শুধু চাই- খুনিদের ফাঁসি হোক। দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।”