রাশেদ জঙ্গি হচ্ছে, আঁচ পেয়েছিল স্বজনরা

গুলশান হামলার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ আসলাম হোসাইন ওরফে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ওরফে র‌্যাশের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি স্বজনরা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।

বদরুল হাসান লিটনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2017, 03:36 PM
Updated : 28 July 2017, 03:40 PM

নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুস সালামের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট আসলাম রাজশাহী শহরে ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করতে গিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে স্বজনরা জানান।

মোহাম্মাদ সেন্টু নামে তার এক মামা শুক্রবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজশাহী শহরে কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকত আসলাম। সেখান থেকে সে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পরিবারের সদস্যরা আসলামকে তার খালার বাসায় রেখে আসে। কয়েকদিন পর সে খালার বাড়ি থেকে চলে যায়।”

খালার বাসায় রাখার আগেও আসলাম একবার নিখোঁজ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসে থাকাকালে গত বছর মে মাসে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজা-খুঁজির করে মাসখানেক পর তাকে পাওয়া যায়। তারপর ছাত্রাবাসে না দিয়ে খালার বাসায় রাখা হয়।

আসলামের মামা বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মথুরা নওদাপাড়া গ্রামে। সাত-আট বছর আগে তার বাবাও এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। পেশায় ঠিকাদার সালাম চেক জালিয়াতির এক মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিন বছর ধরে নিখোঁজ বলে তার স্ত্রী নাসিমা বেগম জানান।

ছেলে সম্পর্কে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসলাম নওগাঁর কাঞ্চনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে নানার বাড়িতে চলে আসে। নওহাটা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশের পর রাজশাহী শহরের একটি বেসরকারি প্যারামেডিকেলে ভর্তি হয়।

“সেখান থেকে আসলাম ভর্তি হয় রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। গত বছর তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। সে শহরের একটি মেসে থাকত।”

গত বছর রোজার শুরুতে ওই মেস থেকে আসলামকে এনে নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়ায় তার খালার বাসায় রেখে আসা হয় জানিয়ে নাসিমা বলেন, “সেখান থেকে গত বছরের ১১ রমজান (জুন মাসে) আসলাম নিখোঁজ হয়। এরপর তার সঙ্গে আমাদের আর যোগাযোগ হয়নি। আসলাম একদিন ফিরে আসবে এ আশায় ছিলাম। তাই থানায় জিডি করা হয়নি।”

গত বছর রোজার শেষ দিকে ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলা চালায় পাঁচ জঙ্গি। তাদের রুখতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন সেনা কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিরা নিহত হওয়ার পর সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ‘নব্য জেএমবি’ এই হামলা চালায় বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তামিমসহ এই জঙ্গি গোষ্ঠীর শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নিহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে, তাদের মধ্যে সর্বশেষ ৭ জুলাই গ্রেপ্তার সোহেল মাহফুজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসলাম ওরফে র‌্যাশকে শুক্রবার ভোরে নাটোরের সিংড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বিকালে মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আসলাম নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনিও এই হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন।

আসলামই সীমান্তের ওপর থেকে আসা অস্ত্র-গোলাবারুদ তামিমসহ অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন বলে জানান তিনি।

গুলশানের ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে যে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়েছিলেন, তারাও ঢাকার নামি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।

রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে থেকে পড়ার সময় আসলাম পবার মথুরা নওদাপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে নামাজ পড়ার কথা বলতেন বলে তার এক খালা জানান।

নাম প্রকাশ না করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলাম মাঝে মধ্যেই বাড়িতে আসত। সবাইকে নামাজ পড়ার কথা বলত। কেউ নামাজ না পড়লে তার উপর রাগারাগি করত।”