বিচারকদের চাকরি বিধিমালা জমা পড়েছে প্রধান বিচারপতির কাছে

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর তা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে জমা পড়েছে; যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে রেষারেষি চলছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 01:06 PM
Updated : 27 July 2017, 03:52 PM

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে চূড়ান্ত খসড়াটি হস্তান্তর করেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রী মহোদয় বিকালে নিজে গিয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া হস্তান্তর করে এসেছেন।”

আইনমন্ত্রী প্রায় ৪০ মিনিট প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ।

আইনমন্ত্রী কী বিষয়ে সাক্ষাতে এসেছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যতটুকু শুনেছি, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন মন্ত্রী মহোদয়।”

গত বছর আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া পাঠানোর পর তাতে আপত্তি জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর থেকে এ নিয়ে রশি টানাটানি চলছিল।

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।

আপিল বিভাগের নির্দেশনায় গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার ওই বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে আপিল বিভাগ।

দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি ‘সিদ্ধান্ত’ দিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে ‘রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে’।

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মাধ্যমে সরকারকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সময় নেওয়া হচ্ছিল।

এর মধ্যে গত ২০ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করতে যান আইনমন্ত্রী। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গেজেট প্রকাশের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে সরকার।