বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাস্তবভিত্তিক প্রচারণা চান তথ্যমন্ত্রী

বাল্যবিয়ে ও যৌতুক প্রতিরোধে গবেষণা ও বিভিন্ন প্রকল্পে ‘সময় ও অর্থ নষ্ট’ না করে বাস্তবভিত্তিক প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 11:41 AM
Updated : 27 July 2017, 11:41 AM

বৃহস্পতিবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (পিএসটিসি) জনসংখ্যা বিষয়ক প্রকল্প ‘হ্যালো আই এম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এর সমালোচনা করেন মন্ত্রী।

আয়োজকদের উদ্দেশে ইনু বলেন, “আমাদের সমাজের সব মানুষের একটাই ফাইন্ডিংস, বাল্যবিয়ে তো সারা দেশেই হচ্ছে। তাহলে এটা বের করতে গবেষণার কি দরকার? যে টাকা দিয়ে গবেষণা করছেন, সেই টাকাটা দিয়ে যদি দুইটা লিফলেট বানানো হত; বালক-বালিকাদের কাছে গিয়ে বাল্যবিয়ে না করার কথা বলা হত, তাহলে সেটা বেশি কাজে দিত।

“আমি এসব পাইলট প্রজেক্টের পক্ষপাতি নই। এসব গবেষণা করে সময় নষ্ট করার কিছু নাই। পাঁচটা টাকা যে পান, সেটা নিয়ে স্কুলে দেন, দুইটা কথা বলেন, সেটা কাজে লাগবে। আমি এভাবে দেখি বিষয়টা। এই গবেষণার কোনো মূল্য নাই। কত বছরে কে ড্রপ আউট হয়, আমরা জানি।”

এসময় মিনা কার্টুনের মতো ব্যতিক্রমী প্রচারণা কার্যক্রম নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বাল্যবিয়ে নিরোধে যাকে সচেতন করার দরকার, সেখানে ক্যাম্পেইন ম্যাটেরিয়াল নিয়ে দেখাতে পারেন। আমার মিনাকার্টুন যে শিক্ষা দেয়, সেটাও তো আপনি (প্রকল্পের মাধ্যমে) করতে পারছেন না।

“কিশোরীদের কাছে মিনা কার্টুন অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমি তাই আপনাদের বলব, প্র্যাকটিক্যাল ক্যাম্পেইন করুন; একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। সেটা আরো অনেক বেশি সহায়ক হবে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরীদের জন্য।”

কেবল মেয়েদের নয়, প্রচারণায় ছেলেদের প্রতিও গুরুত্ব দিতে সবাইকে আহ্বান জানান জাসদের একাংশের সভাপতি ইনু।

“আপনি ছেলেদের ডাকবেন, কেননা ছেলেরাই তো সমস্যা তৈরি করছে। আপনি যদি গ্রামে বালকদের স্কুলে যান…, আপনি বালিকাদের বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক যে মন্ত্রী মহোদয় তাকেও বলব, ডোনারদের বলব, আমাদের বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনেও এর উল্লেখ আছে যে, আঠারো বছরের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে দিলে মা-বাবা পর্যন্ত শাস্তির আওতাভুক্ত হবে।”

বাল্যবিয়ে বিরোধী প্রচারণার পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে মেয়েদের সচেতনতা তৈরির ওপরও তাগিদ দেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের কনজার্ভিটভ মানসিকতা হওয়ার কারণে মেয়েরা যদি প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে না জানে, তাহলে সে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যখন বাল্যবিয়ে নিরোধ আন্দোলন করব, তখন একই সাথে আমাদের যৌনস্বাস্থ্য ও প্রজনন ক্রিয়া নিয়ে জানাতে হবে।

“কেন ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেওয়া হবে না, সেটা তাদের জানাতে হবে। তারা তখন পরিণত হয় না, সেজন্য বিষয়টি তাদের জানাতে হবে। ১৮ এর আগে বিয়ে হলে, ২০ এর আগে বাচ্চা হলে সে মেয়েটি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে, প্রচারের সময় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে এসব শিক্ষা দিতে হবে।”

ইনু বলেন, “এসব বিষয়ে সচেতন না হলে সে রুগ্ন সন্তান জন্ম দেবে। কিন্তু আমরা তো একটা সুস্থ জাতি চাই। মেয়েদের পাশাপাশি, যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তাকেও জানাতে হবে; সে যেন সন্তান নিতে স্ত্রীকে বাধ্য না করে।”

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক প্রচারণা বাধ্যতামূলক করার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “স্কুলগুলোতে বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষাটি দিতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ক্লাস শুরুর আগে প্রতিদিন এ শিক্ষাটা দেওয়া প্রয়োজন। এখন এটা কোনো স্কুলে করে না।

“আমার নির্বাচনী স্কুলগুলোতে আমি এসব বলেছি, কিন্তু আমি চলে আসার পরই প্রধান শিক্ষক, ইউএনও এটা করে না। আমি বাধ্য করেছি, কোনো স্থানে বাল্যবিযের খবর পেলে সেটা গিয়ে বন্ধ করতে হবে। সে মেয়েটির পরিবার যদি গরীব হয়, তবে তাকে আমরা সহযোগিতা করব। আমরা যারা আছি তারা মনে করি এটা এনজিও এর কাজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। কিন্তু বিষয়টি তেমন না, এই সামাজিক সমস্যাকে সবাই মিলেই সামাজিকভাবেই নির্মূল করতে হবে।”

পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এর নির্বাহী পরিচালক নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুঃস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক দিবালোক সিনহা, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর রিচার্ড লেস, রুটগার্সের প্রতিনিধি নাটালি কোমেন, আইকেইএ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি নয়না চৌধুরীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।