সবাই সম্পৃক্ত না হলে এত দুর্নীতি কেন: মুহিত

প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সবাই দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণেই দেশ আজ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে মত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 07:48 AM
Updated : 27 July 2017, 10:26 AM

তবে মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে- এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে বলেই তিনি আশাবাদী।

বুধবার রাজধানীতে দুদকের হটলাইন-১০৬ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। দুর্নীতিতে আমরা সবাই নিমজ্জিত। সবাই যদি নিমজ্জিত না থাকত তাহলে দুর্নীতি হত না। যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। যদি এতে সবাই অংশ না নেয় তাহলে দুর্নীতি হয় কীভাবে? পরোক্ষভাবে আমরা সবাই দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত।”

পরিস্থিতি এখন এমন, যে অনেক সময় ‘বাধ্য হয়ে’ দুর্নীতিতে জড়াতে হয় বলে মন্তব্য করেন মুহিত। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে জীবনে দুইবার ‘বখশিশ’ দেওয়ার অভিজ্ঞতাও তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

“আমি তখন একজন অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ নাগরিক। ঠিক করলাম, আমার বাড়িতে ন্যাচারাল গ্যাস কানেকশন প্রয়োজন, তখন আমি তিতাস গ্যাসকে বললাম, তোমরা একদিন এসে আমার এই কানেকশনটা দিয়ে যাও। এরপর তারা আসল, আমার বাসায় কানেকশটা দিয়ে দিল।

“তখন কোম্পানির যে কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছিলেন, যাওয়ার সময় তিনি বললেন, স্যার আমাদের কিছু বখশিশ দিতে হয়। তখন আমি ভেরি সারপ্রাইজড, কোনো দিন বখশিশ দিইনি। তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে আমি তো এখন সাধারণ নাগরিক। তখন কিছু বখশিশ দিলাম।”

এর আগে ফিলিপিন্সে চাকরি করার সময় বাসা ভাড়া নিয়ে গ্যাস সংযোগের জন্যও বখশিশ দিতে হয়েছিল বলে জানান মুহিত।

“তারা এসে কাজ ঠিক-ঠাক করে দিল, তারপর তারা যাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবে বখশিশ চাইল, আমিও তাদেরকে কিছু দিলাম। ফিলিপিন্সে এটা খুব স্বাভাবিক কালচার, এতে আমি খুব বেশি সারপ্রাইজড হইনি।”

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানে নিজেই হেসে ফেলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মধ্যেও হাসির রোল পড়ে যায়।    

মুহিত বলেন, “বাংলাদেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি ছিল না। এটা একটা গোপনীয়তার মধ্যে ছিল। একটু শরমের সংশ্লিষ্টতা ছিল।”

নাম উল্লেখ না করে দুদকের সাবেক এক চেয়ারম্যানের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এক সময় দুদকের এক চেয়ারম্যান দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। জেহাদের ভবিষ্যত সব সময় অন্ধকার হয়। কারণ জেহাদ একটি অন্য জিনিস। অব্যশ্যই ধর্মে যুদ্ধে এসব ছিল, এখন আর নাই। জেহাদের নাম নিয়ে কোনো পরিবর্তন হয় না।”

দুদক ও তদন্তকারীদের উদ্দেশে মুহিতের পরামর্শ- “তদন্ত করবেন ভালো কথা, তবে জিহাদি হবেন না। জেহাদি হলে তদন্তের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়।”

সরকারি চাকরিতে বেতন কম বলে দুর্নীতি বাড়ার অভিযোগ ছিল এক সময়। এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে বলেই মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

“সরকারি চাকরিজীবীদের আগে চিন্তুা করতে হত- কীভাবে দুইবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। এখন কিন্তু বলা যেতে পারে সরকারি বেতন মানে সুন্দর জীবন যাপন।”

পরিস্থিতি বদলানোর আশার কথা শুনিয়ে মুহিত বলেন, “আমি আশাবাদী, আমার ধারণা, আট থেকে ১০ বছর পর আজকে যে দুর্নীতি, এই অবস্থার একটি পরিবর্তন আসবে। সাধারণ মানুষেরও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। দুর্নীতি যে করতে হবে এই মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে।”

অর্থমন্ত্রী দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দরপত্রসহ অন্যান্য কাজে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি কমেছে বলেও দাবি করেন।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, “দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। আমরা যারা রক্ষক হিসেবে আছি, তারাই ভক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়ে আছি। এই প্রয়াস বন্ধ হওয়া চাই।”

জনগণের অংশগ্রহণ থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাই হটলাইন-১০৬ খোলা হয়েছে। এতে যে কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির ঘটনা ঘটার আগে ও পরে অভিযোগ করতে পারবেন। এর ফলে আমরা তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নিতে পারব। এই হটলাইন খোলার মাধ্যমে দুদকের সাথে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন হল।”

হটলাইন উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠান থেকে অর্থমন্ত্রী দুদকের কলসেন্টারে ফোন দিয়ে কথা বলেন।

অন্যদের মধ্যে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. নাসির উদ্দিন, কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম এবং দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অফিস চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত যে কোনো ফোন থেকে বিনা খরচে দুদকের হটলাইন ১০৬ এ ফোন করে দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া যাবে।