গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বিসিবির হাতেই

গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে রেখে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতও মেহেদী হাসান পিয়াসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2017, 11:53 AM
Updated : 26 July 2017, 02:11 PM

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার পর্যবেক্ষণসহ রায় দেয়। একে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ‘ভালো’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।

বিসিবির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে পাঁচ বছর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে এই আইনি লড়াইয়ের সূত্রপাত।

২০১২ সালে এনএসসির ওই পদক্ষেপের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে আবেদন করেন বিসিবির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ইউসুফ জামিল বাবু এবং বিসিবির সাবেক কাউন্সিলর স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী।

তখন বিসিবিকে দেওয়া এনএসসির চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে ওই চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালত বিসিবির গঠনতন্ত্রে আনা এনএসসির সংশোধনীকে অকার্যকর ঘোষণা করে।

রায়ে বলা হয়, “জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের অধিভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবে না। তাই আদালত বিসিবির গঠনতন্ত্রের সংশোধনীকে অকার্যকর এবং বাধ্যতামূলক নয় বলে রায় দিচ্ছে।”

হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে এনএসসি ও বিসিবি আবেদন করলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি তা শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই আপিলই বুধবার নিষ্পত্তি করে রায় দিল আপিল বিভাগ।

আদালতে এনএসসির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

বিসিবির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ; আর রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক।

অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত নির্দেশনা দিয়েছে, ইচ্ছে করলে বিসিবি তাদের গঠনতন্ত্র নিজেরাই সংশোধন করতে পারবে। তবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রেখে বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে তা করতে হবে, যেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ এবং সব ধরনের ক্রিকেটাররা এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।”

মাহবুবে আলম আদালতের পর্যবেক্ষণ উদ্ধৃত করে বলেন, “দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বিশেষ করে ক্রিকেটকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য বিসিবি এবং এনএসসিকে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে বলেছে আদালত।”

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মাহবুব শফিক সাংবাদিকদের বলেন, “আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ বলেছেন, গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা বিসিবির হাতেই থাকবে। এনএসসি গঠনতন্ত্র (বিসিবি) সংশোধন করে দিতে পারবে না। গঠনতন্ত্রে কোনো সংযোজন-বিয়োজন করতে হলে সেটা করবে কেবল বিসিবি। অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

“এতে বিসিবি আরও স্বায়ত্তশাসিত হবে, সংঘবদ্ধ হবে, শক্তিশালী হবে। ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বোর্ড দুটিই শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যতে ক্রিকেটের উন্নতি হবে।”

খুশি বিসিবি সভাপতি

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করলেও জরুরি সাধারণ সভা ডাকাসহ বিসিবির নির্বাচনের প্রস্তুতি সেরে রাখার কাজ এখনই শুরু করার কথা জানিয়েছেন সভাপতি নাজমুল হাসান।

রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নিয়ে এখনই কিছু বলা কঠিন, কারণ রায়ের কপিটি এখনও আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। অতএব আমাদের ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

“তবে যতটুকু শুনেছি, তাতে মনে হচ্ছে নিঃসন্দেহে এই রায়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি রায় হয়েছে।”

এই রায়ের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের অধিকার পেয়ে খুশি নাজমুল হাসান।

“যে জিনিসটা বাড়তি হিসেবে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে, এখন যদি কোনো গঠনতন্ত্র বদলাতে হয় ইজিএম এবং এজিএম ডেকে আমরাই তা করতে পারব। বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ আসবে না।”

যে গঠনতন্ত্রের অধীনে গত নির্বাচন হয়েছে, পরবর্তী নির্বাচনও সেভাবেই হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

“সেটা আমাদের উপরে। আমরা ওই গঠনতন্ত্র রাখব, না কি বদলে দেব, সেটা আমাদের উপরে।”

জরুরি সাধারণ সভা বা ইজিএমে কাউন্সিলর কারা থাকবে- প্রশ্ন করা হলে নাজমুল বলেন, “আমরা যে গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে এখানে এসেছি, আমাদের তো এই গঠনতন্ত্রেই করতে হবে। এছাড়া তো কোনো অপশন নেই।”

এনএসসি গঠনতন্ত্রে যে পরিবর্তন এনেছিল, তাতে নির্বাচন করতে ‘ঝামেলা’ হত বলে মনে করেন বিসিবি সভাপতি।

“কারণ তারা চাচ্ছিল তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই আমরা নির্বাচন করি। এটা নিয়ে একটা বৈধতার প্রশ্ন ছিল, কিন্তু সেটা নিয়ে আমার চিন্তা ছিল না।

“আমার চিন্তা ছিল কয়েকটা ব্যাপার, যেমন খেলোয়াড়দের ব্যাপারটা; ক্রিকেট খেলোয়াড়দের একটা কোটা ছিল, সেটাও বাদ দেওয়া হল। কোনো ক্রিকেট প্লেয়ার আসার সুযোগ ছিল না। অথচ অন্যান্য স্পোর্টস থেকে যে কোনো প্লেয়ার আসতে পারবে এটা আইসিসি কখনও মেনে নিত না। আইসিসি যদি না মানত, তাহলে আমাদের অবস্থাটা কী হত?”

এই রায়ের পর নির্ধারিত সময়ে বিসিবি নির্বাচনে আশাবাদী নাজমুল।

“আমরা এখনই ইজিএমের প্রস্তুতি নিয়ে নিচ্ছি। এর একটা টেনটেটিভ ডেটও ঠিক করে ফেলব। আমরা ৩০ তারিখ বোর্ড মিটিং ডেকেছি। সেখানেই বসে আমরা সব কিছু ফাইনাল করে ফেলব।”