তাজউদ্দীন আহমদের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “তাজউদ্দীন আহমদ ছোটবেলা থেকেই ন্যায়পরায়ন ছিলেন। সব সময় তিনি এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।
“তোমরা যারা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাও তারা তাজউদ্দীন আহমদকে একজন আদর্শ বন্ধু ভাবতে পার।”
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২৩ অগাস্ট তাজউদ্দীনসহ জাতীয় চার নেতাকে বন্দি করা হয়। ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের হত্যা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে এই আলোচনায় রাজধানীর আব্দুল্লাহ মেমোরিয়াল হাই স্কুল ও আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
বাবাকে নিয়ে রিমি বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি কলেরা, বসন্ত রোগের মতো মহামারি নিরাময়ে কাপাসিয়ার গ্রামে গ্রামে কাজ করেছেন। তিনি সমস্যার গভীরে চলে যেতেন, কীভাবে তার সমাধান করবেন তাই নিয়ে ভাবতেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ন্যায়পরায়ন ছিলেন।”
তাজউদ্দীন আহমদ ব্যক্তিগত ‘ক্ষোভ-হিংসাকে জয় করেছিলেন’ বলে মন্তব্য করেন রিমি। এসময় তিদনি একাত্তরের ২৫ শে মার্চের গল্প শোনান।
“২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকা অ্যাটাক হলে মা তখন ছোট ভাই সোহেল (তানজীম আহমদ সোহেল তাজ) ও মিমিকে (মাহজাবিন আহমদ) নিয়ে এক সরকারি কর্মকর্তার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই কর্মকর্তার বাসাটি ছিল ধানমন্ডির লেকপাড়ে। সেই কর্মকর্তা পরে মাকে বলেন, বাসাটি নিরাপদ নয় বলে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেবেন। তাদের বাসা থেকে বের করে পরে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেন। মা সেই ছোট সন্তানদের নিয়ে পরে সাত দিন পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন….
বাবা ‘ভীষণ পড়ুয়া’ ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কাপাসিয়া ইংরেজি মাইনর স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাবা প্রচুর বই পড়তেন। বাবাকে যখন ধরে নিয়ে যায়, তখন আমার বয়স ১৪। আমার খুব মনে পড়ে, বাবা প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়তেন।”
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী। তাজউদ্দীনের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও সাবেক সচিব ওয়ালিউল ইসলাম।
তাজউদ্দীন আহমেদের লেখা চিঠি থেকে পাঠ করেন সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নাজু ও তার ডায়েরি থেকে পাঠ করেন মাসকুর-এ-সাত্তার-কল্লোল।
১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র তাজউদ্দিন আহমদ ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগ যোগ দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। পরে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগ ও পরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতেও ভূমিকা রাখেন। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন।