পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে চলছে খালেদা জিয়ার এই মামলার বিচার। ওই আদালতের বিচারক হলেন মো. আখতারুজ্জামান।
সোমবার শুনানিতে দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় আগের তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক নূর আহমেদের তিনটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিয়ে খালেদার অন্যতম আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান দুটি প্রশ্ন (জেরা) করেন।
ওই তিনটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সত্যায়িত অনুলিপি তোলার পর বাদবাকি জেরা করবেন বলে সময় চান রেজাক খান। তখন বিচারক আগামী ২৭ জুলাই পরবর্তী তারিখ রাখেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলেন, আসামি আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে গেছেন। তার জামিন বাতিল করা হোক এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা হোক।
তিনি বলেন, “আসামি পক্ষ এ মামলা পরিচালনায় বিচারককে কোনো প্রকার সাহায্য না করে পুরো বিচারটিকে শুরু থেকেই নস্যাৎ করার জন্য আদালতকে অশ্রদ্ধা করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।”
জামিন বাতিলের বিষয়ে বিচারক তখন খালেদার আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্য জানতে চান।
তিনি বলেন, “হাই কোর্ট তাকে কোনো শর্ত দিয়ে জামিন দেয়নি। হাই কোর্ট জামিন দেওয়ার সময় বলেনি, তিনি মামলা চলাকালে বিদেশে যেতে পারবেন না। সুতরাং তার জামিন বহাল থাকবে।”
আসামি পক্ষের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বিচারককে বলেন, “প্রসিকিউশনের ভাষা জুডিশিয়াল এটিকেটের মধ্যে পড়ে না এবং তার ভাষা জুডিশিয়াল ভাষা নয়।”
এর মধ্যেই আসামি পক্ষ একটি আবেদন দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার জন্য এ মামলা নিয়ে আদালত অবমাননাকর বক্তব্য রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বিতর্ক ও বাক-বিতণ্ডা চলতে থাকার মধ্যে জিয়া এতিমখানা মামলার নথি শুনানির জন্য তোলেন বিচারক।
দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, “এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানি শেষ হয়ে গেছে, এ মামলায় আজকে যুক্তি-তর্ক করা হোক।”
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করে বলেন, “এটি কোনো জুডিশিয়াল কথা নয়। মামলা শুনানির জন্য প্রায় প্রতিদিনই তারিখ রাখা হচ্ছে।”
বাকযুদ্ধের এ পর্যায়ে খালেদার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শুরুই হয়নি। দুদকের পিপি সাহেব বিচারকের সামনে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন।”
তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বললে বিচারক তাকে আস্তে আস্তে কথা বলতে বলেন। বিচারক দুদকের আইনজীবীর ইশারায় মামলার তারিখ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন খালেদার আইনজীবী খোকন।
উত্তেজনার এক পর্যায়ে বিচারক আখতারুজ্জামান বলেন, “আপনি সিনিয়রদের কাছ থেকে কিছু শেখেননি? এগুলো কোনো আইনজীবীর কথা হতে পারে না।”
এসময় বিচারক আদালতের কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গ্রেপ্তার করতে।
তখন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীসহ আসামি পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা খোকনের হয়ে বিচারকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিচারক তখন ‘ঠিক আছে’ বলে এজলাস থেকে নেমে যান।