জীবিতকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবেদন, ওসিকে আদালতের ভর্ৎসনা

হজের জন্য পুলিশ প্রতিবেদনে জীবিত এক ব্যক্তিকে মৃত দেখানোর ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার ওসিকে ভর্ৎসনা করে সতর্ক করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2017, 02:45 PM
Updated : 24 July 2017, 02:48 PM

তলবের পর আদালতে হাজির হয়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির বিষয়ে সতর্ক করে দেয়।

পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি যেন নির্বিঘ্নে হজে যেতে পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

আদালতে ওসির পক্ষে ছিলেন শাহরিয়া কবির বিপ্লব; রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী এম খালেদ ও মো. কায়সার জাহিদ ভূঁইয়া।

আগের দিন শুনানিতে শাহরিয়া কবির বলেন, পুলিশ সুপারের কাছ থেকে মোট ১৯৯ জনের বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ পান আখাউড়ার ওসি। তিনি ১০ জন এসআই ও একটি ফাঁড়িকে এসব প্রতিবেদনের দায়িত্ব দেন।

ভুক্তভোগী আজাদ হোসেন ভূঞা

“সবাই রিপোর্ট জমা দিলেও এস আই আবুল কালাম আজাদ টেলিফোনে থানার কম্পিউটার অপারেটরের কাছে দেওয়া মৌখিক প্রতিবেদনে একজন মৃত ও আরেকজনের বিষয়ে দুটি মামলা আছে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু অপারেটর যার বিরুদ্ধে মামলা আছে, তার স্থলে মৃত ব্যক্তির নাম লেখেন।”

এসময় আদালত বলে, “আপনি এ মামলায় লড়বেন? জবাবে তিনি বলেন, না, আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি।”

পরে আদালত রিট আবেদনকারীর পক্ষের মত জানতে চাইলে এম খালেদ বলেন, পরবর্তীতে পুলিশ একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, যেটি হজযাত্রীর অনুকূলে নয়।

“ওখানে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। কিন্তু একটি মামলায় তিনি খালাস। আরেকটিতে জামিনে আছেন।”

এ সময় আদালত বলেন, উনি হজে যেতে পারবেন কি না?

জবাবে এম খালেদ বলেন, প্রতিবেদন অনুকূলে দেয়নি। তাই পারবেন না।

এ সময় আদালত ওসির আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলে, “মামলার বিষয়ে বিস্তারিত নেই কেন। পুলিশ তো জানেই না উনি মামলায় খালাস বা জামিন পেয়েছেন। আর আদালত জানতে চেয়েছে সে জীবিত না মৃত সেটা তো আপনরা নির্দিষ্ট করে বলেননি। আপনারা শুধু ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন, কনস্টেবল দেখাচ্ছেন, পুলিশ সুপার দেখাচ্ছেন।

“ওসির কাছে কোনো আপডেট তথ্য নেই। যে তার এলাকার লোকের খবর জানে না, তার কোনো দরকার আছে? এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

জবাবে তার আইনজীবী ক্ষমা চেয়ে সোমবার প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপনের জন্য সময় আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে।

সে অনুযায়ী সোমবার প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করলে আদালত ওসির নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেয়।

পুলিশ প্রতিবেদনে হজ্জ গমণেচ্ছু এক ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে আখাউড়ার ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদারকে গত ১৭ জুলাই তলব করে হাই কোর্ট। রোববার হাই কোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাকে।

একই সঙ্গে পুলিশ প্রতিবেদনে জীবিত ব্যক্তিতে মৃত দেখানো কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম সচিব, পুলিশ প্রধান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি ও আখাউড়া থানার ওসিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আখাউড়ার বাসিন্দা আজাদ হোসেন ভূঞার হজ্জে যাওয়ার কথা ছিলো ১৮ বা ২৯ জুলাই। কিন্তু ২০ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পুলিশ প্রতিবেদনে তাকে মৃত উল্লেখ করা হয়।