যিনি কোচিং করবেন, তার সর্বনাশ হবে: শিক্ষামন্ত্রী

কোচিং বন্ধে আইন করা হচ্ছে জানিয়ে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2017, 02:01 PM
Updated : 24 July 2017, 02:01 PM

সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিকদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কোচিং একটা লাগছে। এই বেআইনি কাজ বন্ধ করে দিব। যিনি কোচিং করবেন তার সর্বনাশ হয়ে যাবে। আগে আইনটা হোক তারপর দেখতে পাবেন।

“বেতন দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে, এখন কোচিং যারা খুলবেন, কোচিং ইন্সপায়ার করবেন... আইনটা হয়ে যাক, বুঝবেন মজা। এসব করে আমাদের ছেলে মেয়েদের সর্বনাশ করে দিচ্ছেন।”

সেকন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টের (সেকায়েপ) আওতায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচিতে নির্বাচিত সেরা সংগঠক সম্মাননা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি আসে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সহযোগিতায় বই পড়া কর্মসূচিতে জড়িত ঢাকা বিভাগের ৪৪টি উপজেলার মোট ১৭৫জন শিক্ষক বা গ্রন্থাগারিককে অনুষ্ঠানে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে কোচিংয়ে জড়িত কিছু শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে পুরো শিক্ষকতা পেশাকে কলঙ্কিত করছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ।

তিনি বলেন, “শেষ রাতে পরীক্ষার প্রশ্ন কীভাবে দিবে, সেটা নিয়ে থাকে। পরীক্ষার ফাঁস করানোর চিন্তা- এগুলা আর সম্ভব না। স্যারেরা খাতা দেখেন না, ওজন করে করে নম্বর দেন, চার বছর ধরে ব্যবস্থা নিয়েছি, এবার ভালোভাবে একটু খাতা দেখা হয়েছে, দেখেন, পরিবর্তন হয়ে গেছে।”

পাঠ্যবইয়ের বাইরের বই পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে আমরা যে পাঠদান করছি তাতে সামান্য জ্ঞান দিতে পারি। কিন্তু পড়ার অভ্যাসটা যদি গড়ে দিতে না পারি তাহলে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পারব না। সেজন্য আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি।”

পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সাল থেকে এই প্রকল্প চালু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ২৫০টি উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার প্রতিষ্ঠানে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে সেখানে বই পড়বার একটি প্রতিযোগিতা হয়। এই সময়ে প্রায় ৩৫ লাখ বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬১ লাখ শিক্ষার্থী বই পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ২০১৭ সালে শুধু ২১ লাখ শিক্ষার্থী বই পড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে।

“যেখানে মানুষ কম পড়ে সেখানে আমরা লাখ লাখের হিসাব বলছি। সাত বছরে ২১ লাখ পুরস্কার বিজয়ী পাঠক ৩৪ লাখ বই পুরস্কার হিসাবে পেয়েছে। এভাবে আমাদের এটা প্রসারিত হয়েছে।”

নিজেরা বই পড়ার পাশাপাশি সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নাহিদ বলেন, “শিক্ষকের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যত প্রজন্ম, মানুষ কীভাবে গড়ে উঠবে। তিনি যদি সৎ না হন, তিনি যদি মূল্যবোধ সম্পন্ন না হন, ন্যায়পরায়ণ মানুষ না হন, তিনি যদি আন্তরিকভাবে গড়ে না তোলেন, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমরা কিছু লোকের জন্য, যারা শিক্ষকতা পেশায় কাজ করেন তাদের সবাইকে কলঙ্কিত হতে দিতে পারি না।”

অনুষ্ঠানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়ে না, তা কিন্তু না। আসলে তারা সুযোগটা সেভাবে পায় না। বইপড়াটা খুব কঠিন কাজ। পাঠ্যবই পড়া সহজ। কারণ পাঠ্যবই মানে টাকা। লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে। এ কারণে পাঠ্যবই না পড়লে পিটিয়ে হলেও পড়ানো হয়।”

তিনি বলেন, যে বই মানুষকে টাকা দেয় না, বিকশিত করে সেই বই পড়ার লোক কিন্তু অনেক কম। সেই বইয়ের পাঠক পাওয়া কঠিন। পৃথিবীর যে জনসংখ্যা তার মাত্র ৬ শতাংশ সেই বই পড়ার ক্ষমতা রাখে। তারা যদি না পড়ে তাহলে বই পড়ুয়ার সংখ্যা ৩ শতাংশে নেমে আসে।

৪০ বছর ধরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কাজ করে বছরে সর্বোচ্চ ৪ লাখ পর্যন্ত পাঠককে পড়ানো সম্ভব হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সেটা এখন ২৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। আমার জীবনে এমন আনন্দের আর কিছু নাই।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা বিভাগের ৪৪টি উপজেলায় মোট ১৭৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৬ সালে ঢাকা বিভাগে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯১৪ জন শিক্ষার্থী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ৮০ শতাংশ পাঠক মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৫০ জন পাঠক মূল্যায়ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৪১ কপি বই পুরস্কার পেয়েছে।

নির্বাচিত সংগঠকদেরকে ৪ হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট, বই ও সনদ প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানে।

সেকায়েপ প্রকল্প পরিচালক মাহামুদ-উল-হকের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বক্তব্য দেন।