৭ খুনের দণ্ড না কমাতে অ্যাটর্নি জেনারেলের দুই যুক্তি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় বিচারিক আদালত যে দণ্ড দিয়েছে, আপিলের রায়ে তা না কমানোর আরজি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তা না হলে আইন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা ব্যাহত হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2017, 05:43 PM
Updated : 23 July 2017, 05:43 PM

শুধু তাই নয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতেও বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি।

রোববার হাই কোর্টে চাঞ্চল্যকর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলে রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মাহবুবে আলম।

বিচারপতি ভবানী প্রসাদসিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ মামলার আপিল শুনানি চলছে।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

জাহিদ সরওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার আপিল শুনানি শেষ করেছে। সোমবার রাখা হয়েছে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য।”

গত ২২ মে থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়ে ৩০ কার্যদিবসের উপরে শুনানি হয়েছে।

শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য যুক্ত থাকায় জনমনে সংশয়-বিষণ্ণতা দেখা দিয়েছে। 

“আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নিম্ন আদালতে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আদালত যে সাজা দিয়েছে তা সঠিক। এই সাজা বহাল থাকার জন্যই আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজনের পাশাপাশি নব্য ধনীদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার নজিরও এই মামলায় প্রকাশ পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাহবুবে আলম।

“সাক্ষ্যে পেয়েছি নূর হোসেনই মাসে মাসে একজন সেনা কর্মকর্তাকে ১০ লাখ করে টাকা দিতেন এবং তার অফিসে একজন সেনা কর্মকর্তা ঘটনার আগের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত ছিল। এতে মনে হয়েছে এরকমভাবে যদি অর্থ ব্যয় না করত, প্রভাবান্বিত না করতে, তাহলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না।”

এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই সঠিকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে জুডিশিয়াল নোটিস দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সমাপনী শুনানিতে সে বিষয়টিও তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন, “প্রথম থেকেই আদালতের উদ্দেশ্য ছিল এখানে যাতে কেউ অপরাধ করে না পার পেয়ে যায়। আজকে যদি কোনো অজুহাতে কারও সাজা কমানো হয়, তাহলে আইন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের যে ভূমিকা সেটা ব্যাহত হবে বলে আমি মনে করি।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। একসঙ্গে দুই মামলার বিচার শেষে গত ১৬ জানুয়ারি রায় দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৈয়দ এনায়েত হোসেন।

সেনাবাহিনীর বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ওই রায়ে; বাকি নয়জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে যারা কারাগারে আছেন তারা হাই কোর্টে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন। এছাড়া নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য নথিও ডেথ রেফারেন্স আকারে হাই কোর্টে আসে।

এরপর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন। বিজি প্রেসে মুদ্রণ শেষে সেই পেপারবুক গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়।

এরপর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আলোচিত এ মামলার শুনানির জন্য গত ১৭ মে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে ২২ মে থেকে শুনানি শুরু হয়।